প্রবাসীর স্ত্রীকে ‘অপহরণ করে বিয়ে’, এসআই গ্রেপ্তার
নরসিংদীতে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ‘অপহরণ’ করে বিয়ের অভিযোগে উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। সেই সঙ্গে ওই নারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে নরসিংদী পুলিশ লাইন থেকে এসআই জিয়া ও সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নের তুলশীপুর থেকে ওই নারীকে (২৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই নারী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল নিলক্ষার এক মালয়েশিয়া প্রবাসী স্ত্রী ছিলেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। বর্তমানে নিলক্ষা এলাকায় প্রশাসনের ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। কিন্তু তা ভঙ্গ করে প্রতিদিনই ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রায়পুরা থানার এসআই জিয়াউর রহমানের এ ঘটনা ঘটল। জিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাউলগঞ্জ গ্রামে।
গ্রেপ্তার হওয়া জিয়াউর রহমান রায়পুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। দ্বিতীয় বিয়ের অপরাধে এক সপ্তাহ আগে তাঁকে রায়পুরা থানা থেকে প্রত্যাহার করে নরসিংদী পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় স্ত্রীর সাবেক প্রবাসী স্বামী আদালতে মামলা করলে আজ সোমবার সকালে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী ওই ব্যক্তির কক্ষ থেকে নরসিংদীর এক প্রবাসী সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা চুরি করে। এই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মালয়েশিয়ায় একটি মামলা করেন। ছয় মাস আগে সেই মামলাটি বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়। নরসিংদী সদর মডেল থানায় স্থানান্তরিত মামলাটির বাদী ছিলেন প্রবাসীর স্ত্রী। সেই মামলার তদন্তের সুবাধে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সখ্য হয় তৎকালীন নরসিংদী সদর মডেল থানার এসআই জিয়াউর রহমানের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর এসআই জিয়া প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এসআই জিয়ার আরেকটি স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেন ওই প্রবাসী। গত বৃহস্পতিবার তিনি এসআই জিয়াউর রহমান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
মামলার আর্জিতে গত ৬ ডিসেম্বর নরসিংদী রেল স্টেশন মার্কেট থেকে এসআই জিয়া বাদীর স্ত্রীকে অপহরণ করেছে বলে দাবি করা হয়। পরে তাঁকে প্ররোচিত করে এসআই জিয়া বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি আজ সোমবার নরসিংদী সদর মডেল থানায় নথিভুক্ত করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে নরসিংদী পুলিশ লাইন থেকে এসআই জিয়াকে ও সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নের তুলশীপুর থেকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার বাদী বলেন, ‘আমাদের নিলক্ষা গ্রামে দুই পক্ষের টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধে সব কিছু ধ্বংস প্রায়। আর এর মধ্যে পুলিশ রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করে আমাদের সাজানো সংসারটি তছনছ করে দিয়েছে। এসআই জিয়ার কারণে আজ আমার দুই সন্তান মা হারা হয়েছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রেপ্তার হওয়া এসআই জিয়াউর রহমান বলেছেন, ‘আইন মোতাবেক আমার দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁর আগের স্বামীকে তালাক দিয়েছে। এরপর আমি তাকে বিয়ে করেছি। আর মামলায় অপহরণের যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সেদিন আমি নিলক্ষায় সহিংসতার ঘটনার দায়িত্ব পালন করেছি।’
নরসিংদী সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অপহরণ ও প্ররোচনা মামলায় দাবি করা স্ত্রীসহ এসআই জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।