৩০ লাখ শ্রমিকের চলাচলে কিভাবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ?
শিল্পাঞ্চল সাভারে ৩০ লাখ শ্রমিকের একসঙ্গে কর্মস্থলে আগমন এবং প্রস্থানে ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা না হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এজন্য শ্রমিকদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
লকডাউন শুরুর আগের দিন আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাভার উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি বৈঠক থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, এত মানুষের চলাচল নিঃসন্দেহ করোনা প্রতিরোধের জন্যে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। তা সত্ত্বেও লকডাউনের মধ্যে শিল্পাঞ্চল সাভার আশুলিয়ায় কলকারখানা খোলা থাকলেও মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। নইলে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয় ওই বৈঠক থেকে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নিপার সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদাসহ কমিটির সদস্যরা।
সভা শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সদস্য জানান, শ্রমিকদের লকডাউনের আওতায় আনা হলে সবাই বাড়ি ছুটতেন। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি হতো ভয়াবহ। আবার কারখানা চালু রাখায় শ্রমঘন এলাকায় করোনা পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।
তবে কমিটির সদস্য সচিব সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেছেন, শ্রমিকেরা কঠোরবিধি নিষেধ না মানলে পরিস্থিতি শোচনীয় রূপ নেবে। কারখানার কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে শ্রমিক পরিবহণ, নিয়মিত হাত ধোয়া, নিরাপদ দূরত্বে সেলাই মেশিন স্থাপনসহ শ্রমিকদের মাস্ক, গ্লাভস ও প্রয়োজনে ফেসশিল্ড ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ব্যতিক্রম হলে লডডাউনের কোনো ফল আসবে না। বিষয়টি সম্পর্কে তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেড় হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রেখে সংক্রমণ কিভাবে নিয়ন্ত্রিত তবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। এর অংশ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ শয্যার হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ লিকুইড সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয় বৈঠকে।
গত বছরে ১৭ মে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পোশাক কারখানা বন্ধের পাশাপাশি উপজেলার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা জরুরি উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব এবং সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা। অন্যথায় এলাকায় করোনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে-ও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
সেই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নানামুখী চাপে পড়েন কমিটির সদস্যরা। তারপর থেকেই দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা।
সাভারে সংগ্রহ করা ১৫ হাজার সাতজনের নমুনার মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ১৪ জন। আর মারা গেছেন ৩৭ জন।