২ লাখ টাকার গরুর চামড়া আড়তে দিলেন বিনামূল্যে
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম এবার দুই লাখ ১০ হাজার টাকায় গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। গতকাল ঈদের দিন রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তিনি। কেউই চামড়া কিনতে আসেনি। আজ রোববার সকালে ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে এ চামড়া বিক্রি করতে নিয়ে যান যাত্রাবাড়ী। সেখানেও কেউ কিনতে চায়নি। স্থানীয় মাদ্রাসায় দান করতে চাইলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ‘বিক্রি হবে না’ এ ভয়ে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত চামড়াটি বিনামূল্যে যাত্রাবাড়ীর এক আড়তদারকে দিয়ে এসেছেন শফিকুল। আড়তদার বিক্রি করতে পারলে কিছু দেবেন বলে জানিয়েছেন।
চামড়া বিক্রির বিষয়ে শফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চামড়া নিয়ে এ বছরের মতো এত বিড়ম্বনায় আগে কখনো পড়িনি। গতবারও একজন চামড়া কিনতে এসেছিলেন। দরদাম করে আড়াইশ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে আমার যাওয়া-আসায় খরচ হয়েছে দুইশ টাকা। দুই লাখ ১০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিনা পয়সায় দিয়ে এসেছি। আড়তদার বিক্রি করতে পারলে কিছু দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
শফিকুল আরো বলেন, ‘আমাদের আশপাশে অন্যবার ২৫ থেকে ৩০টি গরু কোরবানি হতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ২০টির মতো গরু কোরবানি হয়েছে। কেউই চামড়া বিক্রি করে টাকা পাননি। অন্যান্য বছর কোরবানির দিন সকাল থেকে পাড়ার ছেলেরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে টানাটানি করত। আড়তদারের লোকেরা চামড়ার অগ্রিম টাকা দিয়ে যেত।’
বিস্ময় প্রকাশ করে শফিকুল বলেন, ‘এ ধরনের একটা গরুর চামড়া কয়েক বছর আগেও দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার কেউ চামড়া কিনতে এলোই না।’
এদিকে, কোরবানির চামড়ার মূল্য বিপর্যয় ঠেকাতে সরকার সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ বিদেশে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।
এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ২৮ থেকে ৩২ টাকা। ঈদের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চামড়া ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের এক অনলাইন বৈঠকে এ বছরের চামড়ার এই দর ঘোষণা করেন।
চামড়ার দামের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের গুণগত মান, বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়ার মজুদের মতো নানা বিষয়ে বিবেচনায় রেখে এই দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী একটি বড় গরুর চামড়ার দাম দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে এর কোনো দামই নেই এখন।
চামড়া বিক্রি করতে না পেরে যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শরিফ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রি করা টাকা পুরোটা গরিবদের জন্য নির্ধারিত। কয়েক বছর ধরে গরিব মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।
শরিফ আহমেদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব জায়গায় চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। কোথাও চামড়ার পণ্যের দাম কমেছে শুনিনি। অথচ এবার চামড়ার দামই নেই।’