‘হামাক কেউ কম্বল দেয় না, খালি ছবি তুলে নিয়ে যায়’
দিনভর সূর্যের দেখা নেই। আছে ঠাণ্ডা বাতাস। হাইকোর্টের মাজারের সামনে আগুন পোহাচ্ছেন কয়েকজন। সেখানে বসে থাকা নিজাম উদ্দিন নামে এক লোক বলেন, ‘হামাক(আমাকে) কেউ কম্বল দেয় না। সবাই খালি ছবি তুলে নিয়ে যায়। লাভ কী আমাদের নিউজ করে? নেতারা বড়লোক হয়, আর আমাদের দিকে তাকায়ও না। এই শীতে কেউ কম্বল দেয় না। কীভাবে রাস্তায় থাকি তা যদি নেতারা দেখত, তাহলে বুঝতো আমাদের কষ্ট।’
আজ শনিবার রাজধানীর হাইকোর্টের মাজারের সামনে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে এ চিত্র দেখা গেল। তীব্র ঠাণ্ডা থাকায় সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ বিভিন্ন কাগজ ও লাঠি কুড়িয়ে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ আশায় আছেন, হয়তো বা কেউ তাদের শীত থেকে বাঁচার জন্য কম্বল বা শীতের পোশাক দেবেন।
নিজাম উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করি। থাকার কোন জায়গা না থাকায় গাছ তলায় ঘুমাতে হয়। কিন্তু এ শীতে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। কখন সকাল হবে আর রোদ উঠবে তার আশায় থাকতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘চারদিন ধরে ঢাকায় অনেক শীত। অন্য সময় শীত পরলেও তা গায়ে দেওয়া বস্তা, পলিথিন দিয়ে ঠেকানো গেছে। কিন্তু এবার শীত সহ্য করা যাচ্ছে না।’
জরিনা নামের আরেক নারী বলেন, ‘গরিব মানুষের শীতের কথা কী কমু? দেখতে তো পারতেছেন কীভাবে আমরা আছি। আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। বাচ্চাদের গায়ে জড়ায়া রাখি, যেনো তাদের শীত না লাগে।’ তিনি বলেন, ‘বিকালে শীত থেকে বাঁচার জন্য আমরা সবাই আগুন পোহাচ্ছি। ঢাকায় এমন শীত পড়বে আগে জানলে দেশে চলে যাইতাম।’
রহমত নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘সরকার আমাগো দেখে না? আমরা যে কীভাবে বাইচ্চা আছি তা একমাত্র আল্লাহই জানে।’ তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে শীতে এখানে একজন মরে গেছে। এছাড়া শিশু বাচ্চাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো লাগছে। সরকার যদি এখানে থাকা সবাইকে একটি করে কম্বল দেয় তাহলে মানুষগুলো শীতে কষ্ট কম পাবে।’
রহমত বলেন, ‘অন্য সময় কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করি। যে আয় করি তা দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন শীতের কারণে কাজে যেতে পারছি না। না খেয়ে থাকতে হচ্ছে আমাদের । সরকার যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমাদের এখানে বাঁচা কষ্টকর হয়ে যাবে।’