স্ত্রী-কন্যাকে হত্যা : এক যুগ পর গ্রেপ্তার মৃত্যুদণ্ডের আসামি
স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়ে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাকির হোসেনকে এক যুগ পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানান।
জানা যায়, পারিবারিক কলহের জেরে ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে স্ত্রী নিপা আক্তার ও তিন বছরের মেয়ে জ্যোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন জাকির।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘র্যাব-৪ ঢাকা জেলার সাভারে অভিযান পরিচালনা করে জাকিরকে গ্রেপ্তার করে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার জিয়নপুর গ্রামের মো. আবু হানিফের মেয়ে নিপা আক্তারকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গয়না এবং আসবাবপত্র দেয় নিপার পরিবার। বিয়ের পর থেকে জাকির নিপাকে আরও যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। ইতোমধ্যে তাদের ঘরে জোতি (৩) নামে কন্যা সন্তান হয়।
র্যাব জানায়, মেয়ের বয়স যখন তিন বছর তখন পুনরায় গর্ভধারণ করেন স্ত্রী নিপা আক্তার। সে সময় জানতে পারেন, বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে জাকিরের পরকীয়া সম্পর্ক চলছে। বিষয়টি নিয়ে দাম্পত্য কলহ আরও বেড়ে যায়।
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাকির ও তাঁর ভাবিকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেললে জাকির ও নিপার মধ্যে ফের মনোমালিন্য এবং ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হয় এবং তালাকের ভয়-ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে জানাজানি হলে নিপাকেই সবাই দোষারোপ করেন।
একপর্যায়ে ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাকির ঘুমন্ত নিপা আক্তারকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। নিজের মেয়ে জ্যোতি হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি।
পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের বাবা আবু হানিফ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় জাকির হোসেনসহ তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবি তাহমিনাসহ চারজনের নামে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামি জাকির ৫ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে বেরিয়ে ২০১০ সালে আত্মগোপনে চলে যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেন তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবি তাহমিনাসহ জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুল, জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন ও হাসান এবং জাকিরের চাচাতো ভাই পারভেজ ওরফে রানা ওরফে মিলনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে অন্তঃসত্ত্বা নিপা ও মেয়ে জ্যোতি হত্যায় অপরাধে প্রধান আসামি জাকিরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।