রাঙামটিতে আবারও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের মেয়ে নাজনীন আনোয়ার। গত বুধবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করা হয়।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে আগামী ১৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

মামলার বাদী নাজনীন আনোয়ার রাঙামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলার সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে।

মামলায় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক ফজলে এলাহী, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক অনির্বাণ শাহরিয়ার, জাগো নিউজের রাঙামাটি প্রতিনিধি সাইফুল হাসান, দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ, টিবিএসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দিদারুল আলম ও বণিক বার্তার রাঙামাটি প্রতিনিধি প্রান্ত রনির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও অনেককে বিবাদী করা হয়েছে।

মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিবাদীদের পোস্টে বাদী ও তার মা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ হয়ে মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৩, ২৫, ২৬, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৫ ও ৩৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগেও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দৈনিক পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম’ ও ‘দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামে’ রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ডিসি বাংলো পার্কে অবস্থিত ‘পাইরেটস্’ রেস্টুরেন্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে মামলা করেন এই নাজনীন আনোয়ার। ওই মামলায় গত ৭ জুন সন্ধ্যায় ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে রাঙামাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ৮ জুন রাঙামাটি আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান তিনি। এরপর ১৪ জুন চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান।

এদিকে, আবারও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে সাংবাদিকদের হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক হেফাজত সবুজ। তারা বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার এই অপচেষ্টা রুখতে হবে। রাঙামাটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈকত বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মিশু দে পৃথক এক বিবৃতিতে এই মামলাকে ‘হয়রানিমূলক ও উদ্দেশপ্রণোদিত’ দাবি করে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বান্দরবান প্রেস ইউনিটের সভাপতি আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মংসানু মারমা, সাংবাদিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আল ফয়সাল বিকাশ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মোহাম্মদ, এক বিবৃতিতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক হয়রানির সব পদক্ষেপ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক ফজলে এলাহীসহ ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নও (কেইউজে)। কেইউজের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সৈকত দেওয়ান একটি বিবৃতি দিয়েছেন।