সরকারি কর্মচারীদের বেতন সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরাম। একই সঙ্গে নবম জাতীয় পে-কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আরও পাঁচ দাবি। ছয় সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের ব্যয় বিবেচনায় মোট ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে, বলছেন ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

আজ রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। দাবি তুলে ধরেন ফোরামের আহ্বায়ক মো. হেদায়েত হোসেন।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নবম পে-স্কেল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ও শতভাগ পেনশন দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বেচ্ছায় অবসরে চাকরির বয়সসীমা ২০ বছর নির্ধারণ এবং আনুতোষিক প্রতি এক টাকায় ৩০০ টাকা ও পে-কমিশনে কর্মচারীদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

ফোরামের অন্যান্য দাবিগুলো হলো—সচিবালয়ের মতো সচিবালয়ের বাইরে সকল দপ্তর ও অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণি ও সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণি কর্মকর্তার পদমর্যাদা ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান, ব্লক পদ প্রথা প্রত্যাহার, পদোন্নতিযোগ্য পদ শূন্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর উচ্চতর পদের বেতন স্কেল প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদেরকে যৌক্তিকভাবে ঝুঁকি ভাতা প্রদান ও আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বিলুপ্তি।

দাবির মধ্যে আরও আছে—১১ থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ, টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড, টেকনিক্যাল কর্মচারীদের জন্য দুটি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহাল, এলাকা ভেদে ৭০ থেক ১০০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, সামঞ্জস্যপূর্ণ চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ও যাতায়াত ভাতা প্রদান।

এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বিনাসুদে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা গৃহঋণ সুবিধা এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি শুরু থেকে গণনা ও অযাচিত ২০ শতাংশ হারে পেনশন কর্তনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। 

ফোরামের আহ্বায়ক মো. হেদায়েত হোসেন বলেন, ‘১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য সকল নিয়োগে ৩০ শতাংশ পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অফিসার্স ক্লাব, বিএমএ, কেআইবি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মতো চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য রাজধানীতে একটি কর্মচারী কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। এ ছড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর এবং অধস্তন আদালতে কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

লিখিত বক্তব্যে হেদায়েত বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সিনিয়র সচিব থেকে শুরু করে ২০তম গ্রেডে কর্মরত সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বৈষম্য নিরসনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে শত শত স্কেলকে বিলুপ্ত করে ১০টি গ্রেডের একটি সুষম বেতন কাঠামো উপহার দেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর স্বৈরাচারী সরকার ১৯৭৭ সালের বেতন স্কেলে প্রচলিত ১০টি গ্রেডের পরিবর্তে ২০টি গ্রেডে বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করে। এর মাধ্যমে কর্মচারীদের মাঝে বৈষম্যের সূত্রপাত করা হয়।’

হেদায়েত আরও বলেন, ‘১৯৭৭ সালে ২০টি গ্রেডে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়, তা পরের প্রতিটি বেতন স্কেলেই অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালের সচিবালয়ের সঙ্গে সচিবালয়ের বাইরের কর্মচারীদের মধ্যে পদবি বৈষম্য সৃষ্টি করে এ বৈষম্যকে আরেক দফা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর থেকেই বৈষম্য আর অবহেলাকে ঘিরে কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলন চলতে থাকলেও তার অবসান হয়নি। বরং, বিভিন্ন কৌশলে এ বৈষম্যকে আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সমন্বয়ক মো. লুৎফর রহমান, মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী প্রমুখ।