শিল্পকারখানায় মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখার পাশাপাশি রপ্তানির গতি বৃদ্ধিতে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মালিক-শ্রমিকসহ সবাইকে আমি সবসময় একটা অনুরোধই করব—মালিক-শ্রমিকের একটা সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মালিকদের সবসময় মনে রাখতে হবে—এ শ্রমিকেরা শ্রম দিয়েই তাঁদের কারখানা চালু রাখে এবং অর্থ উপার্জনের পথ করে দেয়। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের এ কথাটা মনে রাখতে হবে যে, এ কারখানাগুলো আছে বলেই তাঁরা কাজ করে খেতে পারছেন, তাঁদের পরিবার প্রতিপালন বা নিজেরা আর্থিকভাবে উপার্জন করতে পারছেন। কাজেই, কারখানা যদি না চলে, তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে।’
শেখ হাসিনা শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে, সে কারখানার প্রতি আপনাদের যত্নবান হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বিনষ্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘অনেক সময় আমরা দেখি—বাইরে থেকে কিছু কিছু শ্রমিকনেতা বা কোনো কোনো মহল উসকানি দেয় এবং একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে—এখন বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। এ প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে শিল্পকলকারখানা, উৎপাদন এবং রপ্তানি যদি সঠিক ভাবে চলতে হয়, তাহলে কিন্তু কারখানাগুলো যথাযথভাবে যাতে চলে, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি সেখানে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে রপ্তানি যেমন বন্ধ হবে, সেখানে কর্মপরিস্থিতি থাকবে না এবং নিজেরাও কাজ হারাবেন। আর তখন বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরতে হবে। সে কথা মনে রেখে শ্রমিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করতে হবে।’
‘কাজেই, এখানে মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালিকদের যেমন শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে, শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং সঠিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি শ্রমিকদেরও দায়িত্ব থাকবে কারখানাটা সুন্দরভাবে যেন চলে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়’, বলেন তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ছয়টি শিল্প খাতের ৩০ প্রতিষ্ঠান বা কারখানাকে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পোশাক খাতের ১৫টি কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের তিনটি, চা শিল্প খাতের চারটি, চামড়া শিল্প খাতের দুটি, প্লাস্টিক শিল্পের তিনটি এবং ওষুধ শিল্প খাতের তিনটি কারখানা।
দেশের অর্থনীতির গতিকে বেগবান ও টেকসই করার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমাণ এবং দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে বিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ৩০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হাতে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২০ তুলে দেন।
পুরস্কার হিসেবে মনোনীত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা কারখানা পেয়েছে ক্রেস্ট, মেডেল, সার্টিফিকেট এবং এক লাখ টাকার চেক। এখন থেকে প্রতিবছর এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল এবং শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের আটটি নবনির্মিত ভবন ও ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কাজের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
প্রধধানমন্ত্রী এদিন যে স্থাপনাগুলো উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে—নারায়ণগঞ্জ বন্দরে মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেল এবং পাঁচ শয্যার হাসপাতাল সুবিধাসহ শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, চট্টগ্রামে ছয় তলা বিশিষ্ট শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তন ভবন, নারায়ণগঞ্জে পাঁচ তলা ভবন বিশিষ্ট আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, বগুড়ায় তিন তলা ভবনবিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র ও আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, গাইবান্ধায় তিন তলা ভবন বিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, বাগেরহাটের মোংলায় তিন তলাবিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, খুলনার রূপসায় চার তলা ভবনবিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র এবং রাঙ্গামাটির ঘাগড়ায় শ্রম কল্যাণ কমপ্লেক্স।