শহীদ মিনারে অজয় রায়কে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়ের প্রতি আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। মহান এই মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ সেখানে নেওয়ার পর ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় সেখানে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বারডেম হাসপাতাল থেকে অজয় রায়ের মরদেহ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর আবাসস্থলে নেওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান তাঁর স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
সেখানে অজয় রায়ের ছোট ছেলে অরিজিৎ রায় আক্ষেপ করে বলেন, ভাই অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পারলেন না বাবা। তিনি বলেন, “বাবা সবসময় যে কথা বলেন, ‘আমি কখনো ভেঙে পড়িনি।’ উনার নাম অজয় রায়। উনার কাজের সঙ্গে নামের সার্থকতা রয়েছে।”
পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যাপক অজয় রায়ের মরদেহ আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে লম্বা সারিতে অবস্থান করছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। শুরুতেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয় মহান এই মুক্তিযোদ্ধাকে। পালন করা হয় এক মিনিট নিরবতা।
অজয় রায়কে শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
সেখানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘অজয়ের মৃত্যু আমার জন্য গভীর শোকের বিষয়। তাঁর মতো ভালো মানুষ, ভালো শিক্ষক পাওয়া দুরূহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তিনি একজন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ। সব কিছু বিবেচনায় তিনি এই জাতির শ্রদ্ধার আসনেই থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কাছেও তিনি একটি শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘বারবার আমি বলছি, নতুন প্রজন্মকে আহ্বান করছি, তোমরা যদি এগিয়ে না আসো, ভয়ভীতি ত্যাগ করে প্রলোভন ত্যাগ করে এগিয়ে আসো, তাহলে এই অজয় রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা সার্থক হবে।’
শহীদ মিনারে অজয় রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তাঁর স্বজন, সহকর্মী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এমন একটি পরিস্থিতিতে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন, অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারটি শুরু হয়েছে। তিনি শান্তি পেতে পারতেন, যদি অভিজিৎ হত্যার বিচারটি দেখে যেতে পারতেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘তিনি বিচার চেয়েছিলেন। চার বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পর বিচার আরম্ভ হয়েছে। এর ভেতরে কোনো পরিণতি তিনি দেখে যেতে পারেননি।’
অজয় রায় ১৯৩৫ সালের ১ মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেন। মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায় ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি, ইতিহাস পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।