শপথ নিয়েই দায়িত্ব পাবেন না দুই মেয়র
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত দুই মেয়র আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শপথ গ্রহণ করবেন। তবে শপথ নিলেও তাঁরা মেয়র হিসেবে এখনি দায়িত্ব নিতে পারছেন না। একই সঙ্গে দায়িত্ব নিতে পারবেন না নবনির্বাচিত কাউন্সিলররাও।
নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমান সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন হওয়ার পরই নবনির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলররা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ১৪ মে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ১৭ মে শেষ হচ্ছে। এরপর নবনির্বাচিত মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।
কারণ, ২০১৫ সালে ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা ওই বছরের ১৪ মে এবং দক্ষিণ সিটির প্রথম সভা ১৭ মে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সভার তারিখ থেকেই পরবর্তী পাঁচ বছরের মেয়াদ গণনা করা হয়।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম আজ বুধবার বিকেলে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরা আগামীকাল শপথ নিলেও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। পরিষদে অনুষ্ঠিত প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আইন অনুযায়ী তাঁদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকছে না।’
কমিশনের একমাত্র এই নারী সদস্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আইন অনুযায়ী, বর্তমান পরিষদে যদি ৭৫ শতাংশ সদস্য উপস্থিত থাকে তাহলে পরিষদ ভাঙার সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে বর্তমান পরিষদের ২৫ শতাংশের বেশি সদস্য যদি পদত্যাগ করেন তাহলে ভিন্ন কথা। তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবে কী করবে।’
একই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমান পরিষদের পূর্ণ মেয়দ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব নিতে পারবেন না। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁরা দায়িত্ব নিবেন।’
এক সময় নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করা এই জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন আর উত্তরে প্যানেল মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন।’
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা ওই বছরের ১৪ মে ও দক্ষিণ সিটির প্রথম সভা ১৭ মে অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোট হয়। দুটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীরা জয় পায়। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হওয়া ভোটে ভোটারদের সাড়া ছিল নগণ্য। দুই সিটিতে মাত্র ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়ে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম পান চার লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষে পেয়েছেন দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট। আতিকুল এক লাখ ৮৩ হাজার ৫০ ভোটে তাবিথকে পরাজিত করেছেন।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক হাজার ১৫০ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পান চার লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।
‘ডিজিটাল কারচুপির’ অভিযোগ এনে ভোটের এই ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ভোটের পরের দিন অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে।
এদিকে এখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে’ মামলা করতে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী রোববার ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটির মেয়র পদপ্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মামলা করতে ট্রাইব্যুনালে যাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।