লড়াই ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না : মান্না

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন এবং আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘যদি সরকারের মধ্যে সামান্য পরিমাণ মূল্যবোধ থাকত, তাহলে তারা এত নিষ্ঠুর হতে পারত না। এ জন্যই লড়াই ছাড়া কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না। তাই আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনারা কীভাবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন। আপনাদের যদি ঐক্যফ্রন্ট ভালো না লাগে, আপনাদের কাছে যদি মনে হয় আর কারো দরকার নেই, আমরা নিজেরাই পারব, তাও ঠিক। খালেদা জিয়ার মুক্তি কিন্তু লড়াই ছাড়া হবে না। লড়াইয়ের মাধ্যমেই তাঁকে মুক্ত করতে হবে।’
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ‘গণতন্ত্র ফোরাম’ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন মান্না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া সারা দেশের নেত্রী, আমিও তাঁকে নেত্রী মানি। আমি যখন দুই বছর কারাগারে ছিলাম, তখন যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, তিনি আমার মুক্তির কথা বলেছেন। আমার একটা কৃতজ্ঞতা বোধও আছে। আমি মনে করি এবং সবাই মনে করে, খুবই অন্যায়ভাবে তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।’
মান্না বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) মুক্তির পথে আইনের কোনো বাধা নেই, তাহলে তিনি জামিন তো পেতেই পারেন। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের এই আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা বলছেন, আপনারা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা চান এবং নিঃশর্ত মুক্তি চান। সত্যিই কি আপনার নিঃশর্ত মুক্তি চান? তাহলে ফোন করলেন কেন? কী কথা হয়েছে ফোনে?’
মান্না আরো বলেন, ‘আজকে দৈনিক প্রথম আলোতে শিরোনাম করা হয়েছে খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পায়নি বিএনপি। ওরা এ রকম লিখল কেন, কোনো সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল? সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসবে? আমি যেখানে সুযোগ পেয়েছি সেখানে বলেছি, আজ আবারও বলছি, আজকে যদি ঘোষণা হয়, আগামীকাল সকাল ১০টায় খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাবেন। তাহলে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে এত মানুষ হবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও জায়গা দিতে পারবেন না। একটার পর একটা দুই নাম্বারি করে এই সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে, সেটা কল্পনা করা যায়? এটা কখনো সম্ভব নয়।’
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘তিন দিন আগে পত্রিকায় পড়লাম খালেদা জিয়ার বোন তাঁর সঙ্গে দেখা করে বাইরে এসে বললেন, তাঁর একটি হাত বেঁকে গেছে আর একটি হাত বেঁকে যাচ্ছে। উনি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না, খেতে পারেন না। এমনকি সব খাবার তাঁর বুকের ভেতর দিয়ে নামে না। আমি আগে মাঝেমধ্যে বক্তৃতায় বলতাম, খালেদা জিয়া টেলিভিশনের পর্দায় এলে অন্ধকার ঘর আলোতে ঝলমল করত। সেই মানুষটি এখন ধীরে ধীরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন এবং আস্তে আস্তে নিঃশেষ হচ্ছেন।’
মান্না আরো বলেন, ‘আমি কিন্তু মনে করি না খালেদা জিয়া একা, তিনি অসহায়। তিনি বাংলাদেশের সবচাইতে সম্পদশালী রাজনীতিবিদ, যার পেছনে ১৭ কোটি মানুষ আছে। এই ১৭ কোটি মানুষকে মুক্তির আন্দোলনের জন্য সংঘবদ্ধ করে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে আপনারা জিতবেন।’
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। প্রধান বক্তা ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, রাজিয়া আলিম, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।