কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে অভিযোগ ও শাস্তিভোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

একজন সাংবাদিককে গভীর রাতে আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় সুলতানা পারভীনের দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছিল। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।

সুলতানা পারভীনের শাস্তি বাতিল করে তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত অব্যাহতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) উপসচিব মোছা. সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক থাকার সময় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ধরে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৮ মার্চ তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা সুলতানা পারভীন গত বছরের ২৫ জুন লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চান। ওই বছরের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত শুনানিতে তাঁর দেওয়া মৌখিক বক্তব্য এবং লিখিত জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী কদরকে তদন্ত বোর্ডের আহ্বায়ক করা হয়।

বোর্ডের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনা ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনার পর সুলতানা পারভীনকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর বিধি ৭(৯) অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৮ জুন তাঁকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। সুলতানা পারভীন ২২ জুন লিখিতভাবে দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন।

দাখিল করা জবাব, তদন্ত প্রতিবেদনসহ অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয়াদি বিবেচনা করে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর ৪(২)(খ) বিধি অনুসারে সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার ‘লঘুদণ্ড’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

পরে সুলতানা পারভীন লঘুদণ্ড মওকুফের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল আবেদন করেন। আবেদন বিবেচনা করে আগের দেওয়া ‘দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা’র দণ্ড বাতিল করে রাষ্ট্রপতি তাঁকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, লঘুদণ্ড দিয়ে জারি করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ১০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে সুলতানা পারভীনকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।