রাস্তা বের করতে ভিক্ষুকের বাড়ি ভাঙার অভিযোগ
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় যাতায়াতের রাস্তা বের করার জন্য উমর আলী নামের একজন ভিক্ষুকের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ঘটনার দুই দিন পরও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উমর আলী উপজেলার চান্দাশ ইউনিয়নের রামরায়পুর গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযুক্তরা হলেন প্রতিবেশী সোহাগ, বেলাল হোসেন, আলাউদ্দিন, মানিক সরদার, মুক্তার সরদার, কমর সরদার, হেলাল উদ্দিন, তাঁর ছেলে সুমন, মছির উদ্দিন মৃধা সদা, অনন্তপুর গ্রামের মিজানুর রহমান মির্জাসহ আরো কয়েকজন।
ক্ষতিগ্রস্ত উমর আলী দাবি করেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু আমার কাজগপত্র হারিয়ে যাওয়ায় কোনো সুবিধা পাই না। আমি বর্তমানে ভিক্ষা করে সংসার চালাই। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই বাছাইয়ের কাজে নওগাঁ সদরে যাই। ওই দিন বিকেলে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার বাড়ির দুটি ইটের ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় প্রতিবেশীরা। সে সময় বাড়ির মেয়েরা তাঁদের বাধা দিলে তাঁরা গরম পানি, মরিচের গুঁড়া, ইটের গুঁড়া ও বালু নিক্ষেপ করে।’
অস্ত্রের মুখে তাঁরা তাঁর এক নাতনির ওড়না খুলে নেয় বলেও অভিযোগ করেন উমর আলী।
এ ব্যাপারের ভিক্ষুকের মেয়ে রুমিয়া বেগম বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু থানা পুলিশ দুই দিনেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযুক্তরা জানায়, তাদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা বের করার জন্যই তাঁরা ওই বাড়িটি ভেঙেছে।
বাদী রুমিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবেশী বেলাল, তাঁর ভাই ও চাচার তিনটি পরিবারের যাতায়াতের জন্য আমার জমির উপর দিয়ে রাস্তা চান। ২০১৯ সালের ২২ মে চান্দাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী রিপনের নেতৃত্বে জোর করে আমার জমিতে লাগানো গাছপালা কেটে রাস্তা তৈরি করে। গত বছর ২৫ এপ্রিল আমার মাত্র আড়াই কাঠা জমির মধ্যে থেকে এক কাঠা দখল করে ইট দিয়ে সোলিং করে পাঁচ ফুট রা্স্তা দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান ঘর করার সময় দুই ফুট ইট তুলে দিবেন বলে জানিয়েছিলেন।’
রুমিয়া আরও বলেন, ‘গত ২৫ জানুয়ারি আমি ঋণ নিয়ে ওই রাস্তার এক ফুট ইট তুলে সেখানে বাড়ির দেয়াল তুলতে গেলে প্রতিপক্ষরা হুমকিধমকি দেয়। আমি এ ব্যাপারে এলাকার সংসদ সদস্য মো. ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের কাছে একটি আবেদন করি। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য চান্দাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনকে নির্দেশ দেন। এরপর আমি দুটি পাকা ঘর তুলি। ঘর করার পরও রাস্তার জন্য চার ফুট জায়গা ফাঁকা রয়েছে।’
চান্দাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী রিপন বলেন, ‘চলাচলের রাস্তা বের করা হয়েছিল। কিন্তু জমির মালিক জায়গা না দিলে আমাদের কিছু করার নেই।’
আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করবেন বলে জানান।