যুক্তরাষ্ট্র থেকে সি আর দত্তের মরদেহ আসছে কাল
বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্তের (সি আর দত্ত) মরদেহ আগামীকাল সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে পৌঁছাবে। ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় তাঁর কফিন নিয়ে ‘এমিরেটস স্কাই কার্গো’ দুবাইয়ের পথে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে সংযোগকারী ফ্লাইটে তাঁর লাশ দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআর দত্তের জামাতা প্রদীপ দাসগুপ্ত।
এদিকে সি আর দত্তের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহকে আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবীরকে সদস্য সচিব করে ১০০১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সি আর দত্তের মরদেহ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে দেশে আনা হবে। দেশে এনে তাঁকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠানের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।
ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট রাতে মারা যান মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন সি আর দত্ত। তাঁর পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ও মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত।
শিলংয়ের লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন সি আর দত্ত। পরে তাঁর বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন তিনি। এরপর খুলনার দৌলতপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন। পরে এই কলেজ থেকেই বিএসসি পাস করেন।
১৯৫১ সালে চিত্ত রঞ্জন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন পর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন পান তিনি। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালংয়ে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন। ওই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করে।
বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন সি আর দত্ত। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেডকোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৯ সালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় ৪ নম্বর সেক্টর। এই সেক্টরে কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন সি আর দত্ত।
দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে সিলেটের রশিদপুরে ক্যাম্প তৈরি করেন সি আর দত্ত। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চা বাগান থাকার সুবাদে আড়াল থেকে শত্রুদের ঘায়েল করেন দ্রুত সময়ে। পরে তিনি রশিদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজার ক্যাম্প স্থাপন করেন। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ঢাকার কাঁটাবন থেকে কারওয়ান বাজার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটি ‘বীরউত্তম সি আর দত্ত’ সড়ক নামে নামকরণ করা হয়।