মৃত্যুর দেড় বছর পর অব্যাহতি পেলেন এরশাদ
মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনা এই আদেশ দেন।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান রচি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ এ মামলায় আদালত পুলিশের দাখিল করা অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এরশাদকে অব্যাহতি দেন। এ ছাড়া এ মামলায় আগামী ৬ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
পিপি বলেন, সম্প্রতি এই আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান। সেই প্রতিবেদন আজ আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারক এই আদেশ দেন।
আসাদুজ্জামান খান রচি আরো বলেন, এ মামলায় মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইয়া ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস। শামসুর রহমান শামসের মামলার অংশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সেই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আদালতকে জানাতে বলেছেন আদালত।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ছিলেন আবুল মঞ্জুর।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে মঞ্জুরকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও মৃত্যুসনদ পেতে দেরি হওয়ায় ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এর আগে ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩তম বিচারক হিসেবে ঢাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।
এদিকে, মামলার অন্য দুই আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসেরের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে। এ মামলায় অভিযোগপত্রের ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন প্রধান আসামি এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেছেন তিনি।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর পরে তাঁকে ১৬ জুলাই রংপুরে নিজ বাসভবন পল্লী নিবাসের লিচুতলায় দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই বছরের ২৬ আগস্ট আদালতকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অবহিত করা হয়। আদালত সে বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমানকে এরশাদ মারা গেছেন কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন ও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।