মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে : আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার একটি তাৎপর্য রয়েছে। কিন্তু আমরা যেহেতু প্রতিবেশী এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। তাই আমরা চেষ্টা করব, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে।’
আইনমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এ সময় আইন সচিব মো. গোলাম সারোয়ারসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ। সেখানে বাংলাদেশ মামলা না করে গাম্বিয়া কেন মামলা করেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বাস করে, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এর মধ্যেই গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি মামলা করেছে। আইসিজের এখতিয়ার খুব যে প্রসারিত আসলে তা নয়, এ আদালতের এখতিয়ার সীমিত। তারপরও এ মামলার একটি তাৎপর্য আছে। তার কারণ মিয়ানমারে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা আইসিজের বিচারপতিরা দেখবেন এবং তাঁরা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনবেন। রাখাইন রাজ্যে যে নৃশংসতা হয়েছে, তা সারা বিশ্বকে গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্য এবং প্রচার করার জন্য আইসিজের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আইসিজের রায়ের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ কী ফল পাবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আইসিজের আদেশ বা রায়ের জন্য আমাদের একটু ধৈর্য ধরা উচিত। তার পর পরবর্তী কর্মপন্থা সম্বন্ধে আলোচনায় যাওয়া উচিত। আইসিজে একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক আদালত। এখানে দুপক্ষের শুনানির নিশ্চয়ই তাৎপর্য আছে। প্রভাব আছে। আমার মনে হয়, সেসবের আলোকেই আইসিজে মামলা শুনানির পরে তাদের বক্তব্য দেবে।’
আইসিজের মুখোমুখি করানোতে মিয়ানমারের ওপর একটি চাপ তৈরি হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছে, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে। গণহত্যার জন্য আমরা অমুক-তমুককে দায়ী করি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের অবস্থান খুব পরিষ্কার।’
তিনি বলেন, আইসিজে হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ফোরাম। যেখানে ১৮ জন বিচারপতি আছেন। তাঁরা শুনবেন। তাঁরা আদেশ অথবা রায় দেবেন।
আইসিজের রায় বা আদেশের পর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সহজ হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এই রায় বা আদেশের পরে আমরা আবার এটা বিশ্লেষণ করব। কিন্তু আমরা যেহেতু প্রতিবেশী এবং সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, তাই আমরা চেষ্টা করব, আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে।’
আইসিজেতে বাংলাদেশ মামলা করল না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘গাম্বিয়া মামলা করেছে। আমার মনে হয়, আমাদের এখানেই থাকা উচিত। আর একটি মামলা বাংলাদেশ করতে পারত কি পারত না, এ মুহূর্তে সেটা কিন্তু একটি একাডেমিক ডিসকাশন। এই একাডেমিক ডিসকাশনে যাওয়ার তো প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘কোনো ফৌজদারি মামলায় যেখানে গণহত্যা হয় বা গণহত্যা হয়েছে, এ রকম কোনো প্রশ্ন উঠে থাকে, সেটার ব্যাপারে সারা বিশ্বের যে কেউ মামলা করতে পারে। কোনো সভ্য দেশে (ফৌজদারি) মামলার ব্যাপারে যদি একটি পুলিশ স্টেশনে শুধু একজন অভিযোগ করে যে এখানে একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেটাই কিন্তু মামলায় রূপান্তর করা যায়। এ ক্ষেত্রে গাম্বিয়া মুসলিম রাষ্ট্র এবং তারা বলেছে, সেখানে মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গাম্বিয়ার মামলা করার এখতিয়ার আছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আইসিজেতে একটি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলা চলতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আইসিজে তদন্ত করছে। আমার মনে হয় ব্যাপারটা সে পর্যন্তই রাখা উচিত।’