মিশ্র ফলের বাগানে সফল তিন বন্ধু
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মিশ্র ফলের বাগান করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন তিন বন্ধু। আর তাদের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বেকার যুবকরা প্রতিদিন ছুটে আসছে তাঁদের বাগানে। অভিজ্ঞতা আর পরামর্শ নিয়ে অনেকেই এমন বাগান করার পরিকল্পনা করছে।
এই সুন্দর উদ্যোগটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকার কৃষি অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
ওই তিন বাল্যবন্ধু কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর কাচারিপাড়ার বাসিন্দা। এদের মধ্যে মোস্তফা একটি প্রাইভেট অফিসের গাড়িচালক। এইচএসসি পাস করা আশরাফুল বেকার। আর মোবারক কৃষক। তাঁরা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে ইউটিউবে দেখা নানান উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁদের মনোপুত হচ্ছিল না।
অবশেষে গত বছর ইউটিউবে মিশ্র ফলের বাগান করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফল হওয়া যুবকদের বিষয়ে জেনে উদ্যোগী হন। গ্রামের এক কৃষকের কাছ থেকে বছরে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার শর্তে ৪৩ শতাংশ ভূমি লিজ নিয়ে বাগানের কাজ শুরু করেন।
সেই জমিতে রোপণ করেন ৪০০টি থাই পেয়ারা, ১০০টি মালটা, ৫০টি পেঁপে, ১০টি কাশ্মীরি আপেল কুল, ১০টি করে বারোমাসি সিডলি লেবু, চায়না ও দার্জিলিংয়ের কমলার চারা। জমি লিজের টাকা, বাগানের পরিচর্যা, চারা কেনা, বাগানের চারপাশে ও উপরে জিআই তার আর সূতার জালের বেষ্টনি দেওয়াসহ সর্বমোট তাদের খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা।
তাঁদের শ্রম আর যত্নে এক বছরের মাথায় ব্যাপকভাবে ফলন আসে থাই পেয়ারা, পেঁপে আর আপেলকুলের। পাশাপাশি কিছু ফলন এসেছে লেবুতে। ফলনের অপেক্ষায় মালটা, চায়না আর দার্জিলিংয়ের কমলার। এরই মধ্যে তাঁরা বাগানের পেয়ারা, পেঁপে আর আপেল কুল বিক্রি করেছেন লাখ টাকার উপরে। প্রায় বিচিহীন আর সুমিষ্ট থাই পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে বাগান থেকেই পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
নিজেদের সফল বলে উল্লেখ করে তাঁরা জানান, এটি একটি লাভজনক চাষ। ধানসহ অন্য ফসল বাদ দিয়ে এই পেয়ারার চাষ করলে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবে।
এই সফল তিন বন্ধুর মিশ্র ফলের বাগানের সাফল্যের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন আসছে আগ্রহী বেকার যুবকরা। তারা বাগানে এসে মুগ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি বাগান করার খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নিচ্ছে তাঁদের কাছ থেকে।
পাশের গ্রামের রাকিব, কবির আর আলম মেম্বার নামের তিন জানান, এঁদের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তাঁরাও এমন বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আগ্রহী উদ্যোক্তাদের অভিমত, যে কেউ এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে লাভবান হতে পারবেন। এতে বেকারত্ব দূরসহ এলাকা হবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। পাল্টে যাবে এই এলাকার কৃষি অর্থনীতির চিত্র।