মায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ছেলেকে খুন, তিন বছর পর ছদ্মবেশী খুনি গ্রেপ্তার

পারিবারিকভাবে কবির মিয়ার (৪০) সঙ্গে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিনা বেগমের শত্রুতা ছিল। এর জের ধরেই কবির রিনা বেগমের ছেলে সোহরাব ওরফে মুসাকে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। খুনের পর কবির মিয়া এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান এবং ছদ্মবেশে ট্রাক চালানো শুরু করেন। তিন বছর পর কবিরকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুসা হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর তুলে ধরেন সিআইডির ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোপলিটনের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মাঈনুল হাসান। তিনি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর থানার মাওনা বহেরারচালা এলাকা থেকে গতকাল শুক্রবার কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, একটি ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কবির বেলাব উপজেলার খামারেরচর গ্রামের বাসিন্দা। এই হত্যাকাণ্ডে কবিরের সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আসামি শিপন, বাচ্চু মিয়া।
সিআইডির ডিআইজি বলেন, ইউপি সদস্য রিনা বেগমের সঙ্গে কবিরের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জেরে রিনা বেগমের ছেলে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে কবির। এ ঘটনা বুঝতে পেরে রিনা বেগম ছেলে ফরিদকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেন।
ফরিদকে না পেয়ে কবির ও শিপন ইউপি সদস্য রিনা বেগমের আরেক ছেলে মুসাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেসময় আসামি বাচ্চু মিয়া রাতে মুসার বাসায় তার সঙ্গে ঘুমাতেন। এজন্য তারা বাচ্চু মিয়াকে কাজে লাগায়। আসামিরা বাচ্চু মিয়াকে টাকা দেয় এবং ভয় দেখায়। তাদের পরিকল্পনা মতোই ২০১৭ সালে ১২ অক্টোবর রাত ২টার দিকে বাচ্চু মিয়া মুসাকে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে আসে।
সিআইডি কর্মকর্তা আরো বলেন, শিপন ও কবির তখন মুসাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা বেঁধে কুকুরমারা স্কুলের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে শফিক, মিলন, তুহিন নামে কবিরের আরো তিন সহযোগী ছিল। এর মধ্যে শফিক ও মিলন মুসার দুই পায়ে, তুহিন মাথা এবং শিপন ডান হাতে ধরে রাখে। এরপর প্রথমে শিপন এবং পরে কবির মুসার গলায় ছুরি চালিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।’
এ ঘটনায় নিহত মুসার মা রিনা বেগম বাদী হয়ে কবিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বেলাব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বেলাব থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছিল। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে নরসিংদী জেলার পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয়।
পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবেল শেখ মামলাটির তদন্ত করে মামলার এজাহারনামীয় আসামি কবিরসহ তিনজন এবং এজাহারের বাইরে আরো দুজনসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগের বিরুদ্ধে রিনা বেগমের নারাজির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেয়।