মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে পশুর চ্যানেলের বালু ডাম্পিংয়ের প্রতিবাদ
মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিংয়ের প্রতিবাদ এবং ফসলি জমি ও চিংড়ি ঘের রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে গ্রামবাসী। পশুর নদের তীরবর্তী চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলায় শত শত নারী-পুরুষ আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে গ্রামবাসী। সেখানে কৃষিজমি জমি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক ডাইক নির্মাণ ও বালু ডাম্পিং চেষ্টার অভিযোগ করে তারা।
স্থানীয়দের দাবি, ফসলি জমি ও জলাভূমির শ্রেণিবিন্যাশে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্যসহ স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা। আর চলতি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুমে বালু ঝড়ে বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশের শংকায় চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে তারা।
তাদের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চীনা কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই নামমাত্র ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ফসলি জমি এবং মৎস্য ঘেরে বালু ডাম্পিং চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে মো. আলম গাজী লিখিত বক্তব্যে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত চীনা কোম্পানি জমির মালিকদের কিছু না জানিয়ে কৃষি জমি ও মৎস্য ঘের শুকিয়ে বালু ডাম্পিং করার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ডাইক নির্মাণ শুরু করেছে। পরে তাঁরা এ বিষয়ে আপত্তি জানালে ১০ বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কৃষিজমি ও মৎস্য ঘেরের জমিতে বালু ডাম্পিং করা হলে জীবন-জীবিকার উৎস বন্ধ হয়ে যাবে তাঁদের।
গ্রামবাসী জানায়, যে জমিতে ধান উৎপাদন করে সেই একই জমিতে মৎস চাষ করে সংসার চালাতে হয় তাদের। তাই ধান উৎপাদন ও মাছের চাষ বন্ধ হলে বেকারত্ব বৃদ্ধিসহ পথে বসবে অসংখ্য পরিবার। এ ছাড়া বালু ভরাটের কারেণ আগামী ৫০ বছরের জন্য চরম দূরবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাদের। তাই ফসলি ও মৎস্য চাষের জমিতে নদী ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জমির মালিক ও গ্রামবাসী। আর এ জন্য কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, চীনা ড্রেজিং কোম্পানি ও এলাকাবাসী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাপার বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী নূর আলম শেখ বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত। আলোচনা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ ঠিক হয়নি। জমির মালিকদের যে ১০ বছরের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য ফসলসহ পরিবেশগত ক্ষতির মুখে পড়বে ফসলি জমির মালিকসহ জনসাধারণ।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং করার জন্য ১০ ফুট উচ্চতার ডাইক নির্মাণ ও আট ফুট পর্যন্তু বালু ভরাট করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত উচ্চতায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকাবাসীর উত্থাপিত নানা অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে অনেক অসঙ্গতি পাওয়া যায় সেখানে। এসব বিষয় জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ পেয়েছে একটি চীনা কোম্পানি। গত ১৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ নদী খননের কাজ। নদী খননের বালু ডাম্পিং করার জন্য এক হাজার একর ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের জমির ক্ষতিপূরণ দিয়ে তারপর সেখানে বালু ফেলার কথা রয়েছে। বালু ফেলার জন্য ব্যক্তি মালিকানা ছাড়াও প্রায় ৫০০ একর সরকারি খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
নদীর বালু ডাম্পিং বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ড্রেজিং প্রকল্প কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিক ও ক্ষতগ্রস্তদের ১০ বছরের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। শিগগিরই প্রকৃত জমির মালিকদের ক্ষতপিূরণের অর্থ প্রদান করা হবে। সুবিধভোগীরা এ নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।