‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ যুবলীগ নেতা মর্তুজা
করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে লাশের গোসল ও দাফনের জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। মৃত্যু করোনায় হোক বা স্বাভাবিক, এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে সর্বত্র।
আর এমন সময়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মানুষের শেষযাত্রা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এগিয়ে এসেছেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মর্তুজা খান। করোনা বা এর উপসর্গ নিয়ে মৃত ২৭টি লাশের দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছেন তিনি। মানবতার এই ফেরিওয়ালা এখন উপজেলার মানুষের কাছে প্রিয় নাম।
জানা যায়, করোনার উপসর্গ নিয়ে বা করোনায় মারা গেলে কেউ যদি দাফনের কাজ করতে না চায়, তাহলে তাঁদের দাফনের কাজ সম্পন্ন করে আসছেন যুবলীগ নেতা মো. মর্তুজা খান ও তাঁর নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একঝাঁক যুবক-বৃদ্ধ। কাফনের কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকলে সেটিও কিনে দিচ্ছেন তাঁরা। লাশ দাফন-কাফনের সব অর্থ থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করে দিচ্ছেন তাঁরা। এ কাজে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন সাতঘড়িয়ার কৃতী সন্তান এবা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজসেবক সাজ্জাদুর রহমান মৃধা শিপন।
লৌহজং উপজেলার যেকোনো প্রান্ত থেকে করোনা বা করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির খবর পেলেই মর্তুজা খান ও তাঁর টিম ছুটে চলে যান কবর খুঁড়তে। মৃত ব্যক্তির গোসল থেকে শুরু করে দাফন-কাফনের সব ব্যবস্থা করেন। টিমের মধ্যে যে যে কাজে বেশি পারদর্শী, তাঁকে দিয়ে সে কাজ করানো হচ্ছে। কেউ কবর খোঁড়ার কাজ করেন, কেউ লাশ গোসল করার কাজ করেন, কেউ লাশ কাঁধে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন। এমনভাবে লৌহজংয়ে আজ শনিবার পর্যন্ত ২৭টি লাশের দাফন-কাফন শেষ করেছেন মর্তুজা খান ও তাঁর টিম। এখন পর্যন্ত তিনি ও তাঁর পুরো টিম সুস্থ আছেন। করোনা নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে সবার। তাঁদের এমন মহৎ কর্মকে ঘিরে এরই মধ্যে লৌহজংয়ে ব্যাপক প্রশংসার আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, লৌহজং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওসমান গণি তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মু. রাশেদুজ্জামান, ভাইস চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তপন, লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন ও বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মাসুদ খান মো. মর্তুজা খানের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তাঁরা জানান, করোনাভাইরাসের এ দুঃসময়ে প্রিয় মানুষগুলোই দূরে সরে যায়। আর মর্তুজা খান নিঃস্বার্থভাবে লৌহজংবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। লৌহজংবাসী এ ঋণ কখনো শোধ করতে পারবে না।
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মর্তুজা খান বলেন, ‘করোনায় মারা গেলে স্ত্রী, সন্তান, ভাই, আত্মীয়স্বজনসহ কেউই লাশের কাছে তো দূরের কথা, কবর খুঁড়তেও যায় না। তখন এ দাফন-কাফনের কথা চিন্তায় আসে। এবং এবা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান মৃধা শিপন ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি। তখন তিনি ব্যাপক উৎসাহিত করে সার্বিক সহযোগিতা করার কথা বলেন। পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক, গ্লাভস, বুট জুতা থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন, সবকিছু দিয়ে শিপন ভাই সহযোগিতা করছেন। এমনকি গত বৃহস্পতিবারও কথা হয়েছে। তিনি নিজে ১০০ লাশের কাভার, উন্নতমানের পিপিই, এন-৯৫ মাস্কসহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসবেন।’
মর্তুজা খান আরো বলেন, ‘রমজান মাসের শুরুতে উপজেলার প্রথম করোনা রোগীকে কেউ দাফন করছিল না। আমরা সে লাশটির দাফনের ব্যবস্থা করি। এরপর থেকে উপজেলার যেখান থেকেই খবর পাই, সেখানেই পৌঁছে যাই মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করতে। এখন পর্যন্ত মোট ২৭টি লাশ দাফন-কাফনের কাজ সম্পন্ন করেছি। আর লৌহজংবাসীর সুখে-দুঃখে সারা জীবন পাশে থাকব।’
যোগাযোগ করা হলে এবা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজসেবক সাজ্জাদুর রহমান মৃধা শিপন বলেন, ‘করোনার সময়ে সুযোগ পেলে এলাকায় যাই। সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। নতুন করে ১০০ মরদেহ বহনকারী বিশেষ ব্যাগ, স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য আইএসও মানসম্পন্ন পিপিএ, মাস্ক ও গ্লাভস পাঠিয়েছি। যেসব অসহায় পরিবার করোনায় আক্রান্ত অথবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা আমরাই করে দিচ্ছি।’