মাঠ স্কুলের, ভাড়া নেন ‘যুবলীগ নেতা’
নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পিরোলী বাজার এলাকায় অবস্থিত ফাজেল আহম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘ আট বছর ধরে বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশ দখল করে স্থানীয় ‘যুবলীগ নেতা’ নজরুল ইসলাম শেখ দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পিরোলী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম শেখ ২০১১ সালে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণের পর এক হাজার ৭০০ টাকায় এটি ভাড়া দিয়েছেন। শীতলবাটি এলাকার সুজল হোসেন ঘরটি ভাড়া নিয়ে বইয়ের ব্যবসা ও বিকাশের লেনদেন করেন। এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে পশ্চিম পিরোলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ দুটি বিদ্যালয়ের প্রবেশপথেই অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এতে দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠে খেলাধুলায়ও সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয়রা। মাঠের যে অংশ দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, সেই পাশেই ফুটবল খেলার গোলপোস্ট রয়েছে। এ কারণে ফুটবল খেলার সময় খেলোয়াড় ও দর্শকদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।
ইউএনবি এক প্রতিবেদনে জানায়, এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও পিরোলী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফুরকান শেখ জানান, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইকবাল হোসেনের উপস্থিতিতে পরিচালনা কমিটির সভায় দোকানঘরটি অপসারণ করে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথটি পুনরুদ্ধারসহ সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অবৈধভাবে নির্মিত দোকানঘরটি অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক, কালিয়া ইউএনও, এসিল্যান্ড, ইউনিয়ন তহশিলদার ও বোর্ড অফিসে আবেদন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে পিরোলী বাজারের ইজারাদার মুজিবুর রহমান শেখ বলেন, ‘নজরুল ইসলাম বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই অবৈধ দোকানঘর ভেঙে দেবে। এতে এলাকার মানুষ খুশি হবেন।’
পিরোলী গ্রামের হামজা মোল্যা বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গার ওপর জোরজবরদস্তি করে এই দোকানঘর তৈরি করা হয়েছে। এখন অবৈধ দোকানঘর ভেঙে পুনরায় বিদ্যালয়ের রাস্তা করা হোক।
কলেজ শিক্ষার্থী মিনারুল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলাম। অবৈধভাবে দোকানঘর তৈরির কারণে বিদ্যালয়ের রাস্তা দখল হয়ে গেছে। এতে মাঠের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া ফুটবল খেলার সময়ও সমস্যা হয়।’
এদিকে দখলদারের ভয়ে ফাজেল আহম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। পাশের পশ্চিম পিরোলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও মুখ খোলেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে। আমরা অবৈধ দোকান উচ্ছেদ চাই। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারি না। এখন সরকারিভাবে পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে আমি দোকানঘর নির্মাণ করিনি। জায়গাটি পিরোলী বাজারের। আমার মতো অনেকে বাজারের জায়গায় দোকানঘর তৈরি করেছে। আমারটা উচ্ছেদ করতে হলে অন্যদেরটাও উচ্ছেদ করতে হবে।’
এ ব্যাপারে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।