মাকেই বাবা বলে ডাকে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন সে সময়ের মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। তখন তাঁর স্ত্রী উম্মে সালমা ছিলেন সন্তানসম্ভবা। ঘটনার এক মাস পর জন্মগ্রহণ করে রবিউল-উম্মে সালমা দম্পতির মেয়ে কামরুন নাহার রায়না। আর বড় ছেলে সাজিদুল করিম সানির বয়স তখন পাঁচ বছর।
সাজেদুল করিম সানি তার বাবার অনেক স্মৃতি মনে করতে পরে। কিন্তু রায়না তো ছবিতে ছাড়া দেখেইনি বাবাকে। কিন্তু বাড়ির আশপাশের কোথাও ‘বাবা’ ডাক শুনতে পেলে মা সালমাকেই বাবা বলে ডাকে রায়না। এনটিভি অনলাইনকে কথাগুলো বলছিলেন উম্মে সালমা।
উম্মে সালমা বলেন, “বাড়ির ভেতরে কেউ কাউকে বাবা বলে ডাকলে রায়না আমাকেই বাবা বলে ডাকে। কখনো-কখনো ওর বাবাকে নিয়ে কথা উঠলে জানতে চাই, তার বাবা কোথায়? যদি বলি ‘তোমার বাবা আল্লাহর কাছে।’ তখন সে বলে, ‘বাবা আকাশে, আমাকে দেখছে?’”
বাবার কাছেই সব অভিযোগ বলত সানি
ছোট মেয়ে রায়না বাবাকে দেখেনি, কিন্তু ছেলে সাজেদুল করিম সানি বাবাকে দেখেছিল। বাবার অনেক স্মৃতিও তার মনে পড়ে। কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে উম্মে সালমা বলছিলেন, ‘রবিউল সাধারণত রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে বাসায় ঢুকত। তখন আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে থাকতাম। আমি যদি সানিকে একটু বকাবকি করতাম, তাহলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকত বাবা আসার অপেক্ষায়। বাবা এলেই কোলে বসে বাবার কাছে সব অভিযোগ বলে দিত।’
বাবা না এলে ঘুমাত না ছেলে
উম্মে সালমা বলেন, ‘বাবা যত সময় অফিস শেষে বাসায় না ফিরবে, তত সময় সে ঘুমাত না। বাবা এলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে তারপর বাবার কাছেই ঘুমিয়ে যেত। সেই ছেলে আমার সব সময় মনমরা হয়ে থাকে বাবাকে না পেয়ে। সানি স্থানীয় দেপাশাই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বয়স ৯ বছর। সানি যখন স্কুল থেকে পিকনিকে বা কোনো অনুষ্ঠানে যায়, তখন সে তার বাবাবে মনে করে মন খারাপ করে। অন্য সব বাবা স্কুলে যায়, অথচ তার বাবা বেঁচে নেই। হঠাৎ করে কেঁদেও ওঠে সানি। রবিউল মারা যাওয়ার পর থেকেই সামি কারো আদরও সহ্য করতে পারত না। কারো কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না। এসব দেখলে তার বাবার কথা মনে পড়ে। কাঁদে।’
রবিউল করিম প্রতিবন্ধী শিশুদের খুব আদর করতেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। সে জন্য সমাজের অবহেলিত শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাহীন শিশু ও কিশোরদের নিয়ে তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নিজ কাটিগ্রাম গ্রামে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি নামে বিশেষায়িত বিদ্যালয়। এ ছাড়া তিনি গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য ‘নজরুল বিদ্যা সিঁড়ি’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উম্মে সালমা বলেন, ‘বিশেষায়িত বিদ্যালয় ও নজরুল বিদ্যা সিঁড়ি দুটোই চলছে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময় রবিউল করিমের সঙ্গে অনেকে কাজ করেছিলেন। তাঁরা এখনো দেখভাল করেন। আর্থিক ব্যাপারেও তাঁরা সহযোগিতা করেন। সব মিলিয়ে চলছে। বেশি কষ্ট হয় আমার দুই ছেলে-মেয়ের জন্য। আর স্বামীর জন্য আমি গর্ববোধ করি। আমার স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে।’