মজনুকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার মজনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনসারী এ আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানির পর পর আদালতের এজলাসকক্ষে এক আইনজীবী ‘কত বড় ধর্ষক তুই, দেখিরে’ বলেই মজনুর কান মলে দেন। পরে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সেই আইনজীবীর হাত সরিয়ে নেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মজনুকে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উত্তরের উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মজনুর ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
রিমান্ডে নেওয়ার কারণ
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক আবু সিদ্দিক আজ ঢাকা সিএমএম আদালতে মজনুর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্তকালে জানা যায়, ‘উক্ত আসামিকে র্যাব-১ উত্তরার সিপিসি-১-এর চৌকস দল গত ৮ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শ্যাওড়া বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে আর্মি ট্রানজিট গেটের আনুমানিক ২০ ফুট পশ্চিম পাশে পাকা রাস্তার ওপর থেকে গ্রেপ্তার করে। এবং আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভিকটিমের ব্যাগ, মোবাইল, পাওয়ার ব্যাংক এবং আসামি মজনুর ব্যবহৃত একটি জিন্সের প্যান্ট ও একটি জ্যাকেট জব্দ করে।’
‘পরে র্যাব-১-এর কাছে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে হস্তান্তর করলে আমি হেফাজত গ্রহণ করি। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে উক্ত নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। ধর্ষণের বিষয় স্বীকার করে সে একজন অভ্যাসগতভাবে ধর্ষণকারী। সে প্রতিবন্ধী, পাগল, ভ্রাম্যমাণ নারীদের সঙ্গে তাদের সম্মতিছাড়াই এই অনৈতিক কাজ করে আসছে। আসামি ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকে। তার স্থায়ী কোনো বসবাসের জায়গা নেই। ঘটনার দিন আসামি ভিকটিমকে একা পেয়ে তাকে জোর করে ধরে ফুটপাতের পাশের বন-জঙ্গলের ভেতর ফেলে ধর্ষণ করে। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জকর। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেওয়াসহ অন্য কোনো আসামি জড়িত কিনা, তা ছাড়া আসামির দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের লক্ষ্যে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন। আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই করা হয় নাই।’
‘যেহেতু আসামি ভাসমান অবস্থায় থাকে, সেহেতু সে জামিনে মুক্তি পেলে চিরতরে পলাতক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমি জামিনের ঘোর বিরোধিতা করছি। আসামিকে নিয়ে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘অতএব, হুজুরের সমীপে আরজ এই যে, মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করতে আপনার মর্জি হয়।’ আবেদনে লিখেন আবু সিদ্দিক।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর শ্যাওড়া রেলক্রসিং এলাকা থেকে মজনুকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব সদস্যরা। গ্রেপ্তারের পর তাকে মামলা তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে হস্তান্তর করা হয়।
আজ দুপুর দেড়টার দিকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়া মজনুকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। এর পরে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বিকেল ৩টার দিকে মজনুকে এজলাসে তোলা হয়।
এদিকে ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওএসসিসি) চার দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।