ভোটাধিকার কেড়ে একদলীয় দুঃশাসনের শৃঙ্খলে দেশ : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্ন মাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের ওপর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে আমাদের নতজানু করে রাখতে কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন কায়দায় আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে বিশেষ মহলের তাবেদারির জন্য, যাতে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারি। এজন্যই এখন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আবারও একদলীয় দুঃশাসনের শৃঙ্খলে দেশের মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে আজ শনিবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা— এ ঘোষণার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয়। পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। ফলস্বরূপ বাংলা ভাষাকে সমমর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির চূড়ান্ত প্রকাশ।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে ভাষা শহীদরা আমাদের প্রেরণার উৎস। মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা আত্মত্যাগের যে গৌরবদীপ্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তার ফলাফল সুদূরপ্রসারী। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি স্বাধীনতা যুদ্ধে। প্রতিষ্ঠিত করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বজাত্যবোধ ও অধিকারবোধের চেতনাকে শাণিত করেছিল মহান ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই চেতনা নস্যাৎ করে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর আজ জনগণের কাঁধের ওপর চাপানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচনে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে প্রতারিত করা হয়েছে, যা খোলাখুলি কারচুপির এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। গণতন্ত্রকে সমাহিত করে এ দুঃশাসন দীর্ঘায়িত করতে অবৈধ শক্তির জোরে সাজানো মিথ্যা মামলায় জনগণের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছিল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। এখনও তাঁকে কারাগার থেকে নিজ গৃহে রাখা হলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দি। তাঁর সব মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একুশের চেতনার উত্তরাধিকারী হয়ে এদেশের সংগ্রামী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও মৃতপ্রায় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে অতি শিগগির বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদদের অবদানের কারণে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী করে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে সমৃদ্ধ সংস্কৃতিসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।