ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা করায় ১৫ আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত
ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করায় ১৫ আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত করেছে গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে তাঁদের সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না, এ মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির এ সিদ্বান্তের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের শরণাপন্ন হয়েছেন ভুক্তভোগী আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ডেপুটি সেক্রেটারি আফজাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনজীবীরা বার কাউন্সিলে আপিল করতে পারবেন। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। কিন্তু এখানে গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতি ১৫ জন আইনজীবীকে মাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। নোটিশের জবাব দেওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। এখন গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতি ওই আইনজীবীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আপিল করতে পারছেন না। এবং বার কাউন্সিল কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।’
এদিকে ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী আইনজীবীদের সদস্যপদ স্থগিতের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য।
বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনজীবীরা বার কাউন্সিলের আপিল করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই কথা ব্যক্ত করে বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ.ম রেজাউল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গাইবান্ধা জেলা বার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের আইনানুগ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার কোনো এখতিয়ার নেই কোনো আইনজীবী সমিতির। আইন অঙ্গনের বিচার প্রক্রিয়া কী পদ্ধতিতে হবে তা নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সে আলোকেই সুপ্রিম কোর্টসহ সব কোর্টের কার্যক্রম চলছে। ওই কার্যক্রমে যে কোনো আইনজীবীর অংশগ্রহণ করাই বৈধ। ফলে কাউকেই কোনো আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার বা স্থগিত করার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সংক্ষুব্ধ আইনজীবীরা যদি নিয়ম অনুসারে আপিল করেন, তাহলে বার কাউন্সিল যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
ভুক্তভোগী আইনজীবী পীযূষ কান্তি পাল এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনে বলেন, ‘ভার্চুয়াল আদালতে মামলা পরিচালনা করার কারণে ১৫ জনের সদস্য পদ স্থগিত করেছে গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন। এ নোটিশের বিষয়ে আমরা আইনমন্ত্রী, রেজিস্ট্রার জেনারেল ও বার কাউন্সিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য নয়, পেশাগত অসদাচরণের কারণেই ১৫ জনের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। এদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক হলে তাঁরা সদস্যপদ ফিরে পাবেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশে যা বলা হয়েছে :
গাইবান্ধা জেলা বারের গত ১২ মে তারিখের অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্ত এবং তদপ্রেক্ষিতে ১৭ মে তারিখের জরুরি সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ অমান্য, জেলা বারের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, জেলা বার সম্পর্কে কটূক্তি, অবজ্ঞা প্রদর্শন ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের জন্য বারের সদস্যপদ হতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না মর্মে নোটিশ দেওয়া হলো। গত ২ জুন ১৫ জন আইনজীবীকে পৃথক পৃথকভাবে এ নোটিশ দেওয়া হয়।
এ নোটিশের বিরুদ্ধে আটজন আইনজীবী বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আইনজীবী হিসেবে আমাদের মৌলিক অধিকার হচ্ছে আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, সেটা শারীরিক বা ভার্চুয়াল যে পদ্ধতিতেই হোক। ভার্চুয়াল পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি। এর সঙ্গে একটি বারের সব সদস্য সমান সুযোগ পাওয়ার পরও কখনোই নির্দিষ্ট সময়ে একসঙ্গে সে পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। তদুপরি নিজেদের অপরাগতা, অক্ষমতা, অসমর্থতা এবং সর্বোপরি দুর্বলতা আড়াল করতে জেলা বার সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি গত ১২ মে সরকারি নির্দেশনার পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আমরা সমিতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য বার কাউন্সিলের নিকট আবেদন করছি।’