ভাঙা ঘরটা দেখলেন, কারা ভাঙল দেখলেন না
মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেওয়া ঘরে ভাঙন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেছেন, যখন ঘর ভাঙল আপনারা ভাঙা ঘরের ছবি দিলেন। ঘরটা দেখেন তো এটা ম্যাটেরিয়ালের জন্য ভেঙেছে নাকি ভাঙা হয়েছে? সেটি খুঁজে বের করুন। ভাঙা ঘরটা দেখলেন, কারা ভাঙল তা দেখলেন না।
আজ সোমবার বিকেলে সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সদ্যসমাপ্ত নিউইয়র্ক সফর ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলন করেন। বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে গরিব ও অসহায় লোকদের জন্য সরকার ঘর তৈরি করে দেয়। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম দেশে কেউ ঘর ছাড়া থাকবে না। রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষগুলো রাস্তায় এবং বাসার সামনে বারান্দায় থাকা মানুষগুলো অবহেলিত ছিল। এসব অবহেলিত মানুষের জন্য স্থায়ী আবাসন তৈরি করে দিয়েছি। এসব ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে অনেকে দোকানপাট নির্মাণ করেছে, অনেকের বিভিন্ন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আপনারা সে বিষয় দেখেন না কেন? যখন ঘর ভাঙল আপনারা ভাঙা ঘরের ছবি দিলেন। ঘরটা দেখেন তো এটা ম্যাটেরিয়ালের জন্য ভেঙেছে নাকি ভাঙা হয়েছে? সেটি খুঁজে বের করুন। ভাঙা ঘরটা দেখলেন, কারা ভাঙল তা দেখলেন না।
এ সময় ঘর ভাঙার কয়েকটি ছবি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছবিটা দেখে কী মনে হয়? সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় যখন দেড় লক্ষ ঘর দেওয়া হলো। একটা হাতুড়ে দিয়ে ভাঙা তা চিহ্নিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া অতিবৃষ্টি ও করোনার মধ্যেও ঘরগুলো যখন আমরা তৈরি করা শুরু করি তখন দেখি; অনেকে ইট, বালু দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। দরজা, জানালা দিয়ে অনেকে সহযোগিতা করেছে। আমাদের একটা হিসাব ছিল, কত সিমেন্ট ও ইট লাগতে পারে। সেগুলোর পরিমাণ ও ইটসহ দেওয়া হয়েছে। একসাথে এতগুলো ঘর দিচ্ছে। আমার অবাক লাগে আমার সাংবাদিকরা এগুলো খবর নেয় না—করোনার মধ্যে কারা খাবার ও সুযোগ পাচ্ছে? পাশাপাশি একটা মানুষের থাকার জায়গা ছিল না। তারা জীবনের একটা ঠিকানা পাচ্ছে, জমি ও ঘর পাচ্ছে। কিন্তু হাতুড়ি দিয়ে আমাদের ৩০০ ঘর ভেঙেছে। আপনারা এগুলো খুঁজে বের করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা ছাড়া আমরা কোনো কিছু আবিষ্কার করতো পারব না। আমরা হাইব্রিড ধান উৎপাদন করেছি। আমাদের যেহেতু বন্যা হয়, সেই সঙ্গে সবজি, তরি-তরকারি, কবে শীতকাল আসবে, কবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম খাব? এখন সারা বছরই খাওয়া যাচ্ছে। এগুলোই সবগুলোই গবেষণার ফল। এখন চেরি ফল হচ্ছে, আর অন্য সব হচ্ছে। আমার দেশি মাছ হারিয়ে যাওয়ার পথে ছিল। কিন্তু আমাদের গবেষণার ফল হিসেবে এখন সব ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান এবং বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য এক সরকারি সফরে গত ১৯ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। পরে ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান শেষে ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন।
গত ১৯ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য দেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলায় ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেন এবং বিভিন্ন সরকার, রাষ্ট্র ও সংগঠনের প্রধানের সঙ্গে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নর্থ লনের ইউএন গার্ডেনে উৎসর্গকৃত একটি বেঞ্চ উদ্বোধন এবং একটি চারাগাছ রোপণ করেন।