ব্ল্যাকমেইলের শিকার ব্যবসায়ীর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন পাপিয়া
প্রায় দুই মাস আগে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কক্ষে এক মডেল পাঠান নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া। এরপর ওই মডেল ও ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও করেন পাপিয়াসহ তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। ব্ল্যাকমেইল করে ওই ব্যবসায়ী কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন পাপিয়া।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ওই ব্যবসায়ী র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেন র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এরপর গোয়েন্দারা পাপিয়াসহ তাঁর সহকর্মীদের দিকে নজরদারি বাড়ান বলে এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেছেন র্যাবের একটি সূত্র।
সূত্রটি জানায়, অভিযোগ পেয়ে রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে খোঁজখবর নিতে শুরু করে র্যাব। তবে এই খবর পাপিয়ার কাছে পৌঁছে যায়। পরে পাপিয়া ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা দেশের বাইরে পালানোর চেষ্টা করেন। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন। এই খবর জানতে পারে র্যাব। পরে শামীমা নূর পাপিয়া, তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল।
পাপিয়ার মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘র্যাবের গোয়েন্দারা পাপিয়াকে নজরদারিতে রাখার পর জানতে পারেন, পাপিয়া শুধু ওই ব্যবসায়ী নন, এমন অনেক অভিজাত লোকজনকে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে পাপিয়া ব্যবহার করতেন বিদেশি মডেলদের। বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসতেন মডেলদের। মোটা অঙ্কের লেনদেন হতো মডেলদের সঙ্গে। মডেলদের বাংলাদেশে এনে কিছুদিন রেখে আবার পাঠিয়ে দেওয়া হতো। মডেলদের উড়োজাহাজের টিকেটের খরচসহ দিতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা। ’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের একটি সূত্র এনটিভি অনলাইনকে জানায়, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে এক মাস আগে রাশিয়ার কয়েকজন মডেল নিয়ে এসেছিলেন পাপিয়া। এরপর ইমিগ্রেশন থেকে ওই মডেলদের আটকে দেওয়া হয়। কারণ, তারা বাংলাদেশে আসার নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেননি। এরপর শামীমা নূর পাপিয়া বিভিন্ন ক্ষমতাশালীদের দিয়ে ওই মডেলদের বের করে নিতে সক্ষম হন।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পাপিয়ার বিদেশ থেকে মডেল আনার খবর আমরাও শুনেছি। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আমরা কিছুই জানি না। আমরা এই মামলার তদন্তভার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তদন্তের দায়িত্ব পেলে আমরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।’
হঠাৎ কেন পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো- এমন প্রশ্নে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমাদের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাঁর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনেছি। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে কয়েক মাস ধরে বুক করে অবৈধ নারী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। র্যাব বলছে, গত তিন মাসে শুধু ওই হোটেলেই পাপিয়া বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
কে এই পাপিয়া
নরসিংদী জেলা শহরের ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকার বাসিন্দা পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে পাপিয়া। ২০০৯ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২০১২ সালে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে স্নাতক শেষ করতে পারেননি তিনি।
পাপিয়ার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যায় সেই সময়ের ছাত্রনেতাদের কাছে। কারো বক্তব্য, পাপিয়া ছাত্র রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। আবার কারো বক্তব্য, কলেজজীবন থেকেই পাপিয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
যুব মহিলা লীগে পদ পাওয়ার আগেই পাপিয়া বিয়ে করেন নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে। পাপিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে তিনিও এখন পুলিশ রিমান্ডে আছেন।