‘বিল্ডিং ঘরে থাকমু জীবনে স্বপ্নও দেহি নাই’
পাবনা সদর উপজেলার চরআশুতোষপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বিধবা রাশিদা খাতুন (৭০)। ভিক্ষে করেন। পলিথিনে মোড়ানো খুপড়ি ঘরে বসবাস তাঁর। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার সে একটি পাকা ঘর পাচ্ছে। চোখেমুখে তাঁর আনন্দের শেষ নাই। রাশিদা খাতুন বলেন, ‘বিল্ডিং ঘরে থাকমু জীবনে স্বপ্নও দেহি নাই, মুজিবের বেটি আমগোরে বিল্ডিং ঘর দিবো চিন্তাও করি নাই। আল্লাহ তাঁকে হায়াত দারাজ করুন।’
একই এলাকার মমতাজ বেগম (৬৫), সামেলা খাতুন, মর্জিনা খাতুন, বিধবা ইয়াসমিন খাতুন বাছিরুন বেওয়া, তজেম আলী, সামু মণ্ডলসহ অনেকেই এ রকম আনন্দের কথা জানান।
‘আশ্রয়নের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে মুজিব জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সারা দেশের মতো পাবনায় এক হাজার ৮৬ ভূমি ও গৃহহীন পাচ্ছে ‘স্বপ্নের নীড়’।
প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায় গৃহহীনদের মধ্যে দুই শতাংশ জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আগামী শনিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মোখলেছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাবনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পাবনা জেলার ৯ উপজেলার এক হাজার ৮৬টি গৃহহীন পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতাংশ জমিসহ সেমি পাকাঘর পাবে। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুইটি কক্ষের আবাসন। আরও থাকছে একটি রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারের তালিকা পাঠান সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। সেসব তথ্য উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জমি-বাড়ি নেই এমন পরিবারের তালিকা যাচাই-বাছাই করে পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। গৃহহীনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঘরগুলো যাতে টেকসই এবং মানসম্মত হয় সেজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি নিয়মিত তদারকি করছেন।
এরই মধ্যে ঘরগুলি নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাবনা সদর উপজেলায় ৪৪৯, সাঁথিয়ায় ৩৭২, আটঘরিয়ায় ৮৫, ফরিদপুরে ৫০, ঈশ্বরদীতে ৫০, চাটমোহরে ৩০, সুজানগরে ২০, বেড়ায় ২০ এবং ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ১০টি পরিবার এই স্বপ্নের নীড় পাবে।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে গৃহহীনদের এ সব ঘর দেওয়া হচ্ছে।’
পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনরাই পাবেন এ ঘরগুলো। এর ফলে পরিবারগুলো পাবে সামাজিক মর্যাদা ও নতুন ঠিকানা। ঘর বরাদ্দে কোনো ধরনের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না নিতে পারে সেজন্য সঠিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন ঘরের কাজের মান শতভাগ ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে।’