বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সর্বোচ্চ চেষ্টার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যাতে এগিয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কাজ করতে হবে এবং আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশটাকে আরো আকর্ষণীয় করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গভর্নিং বডির সভার প্রারম্ভিক ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সভায় যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে সবদেশেরই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্যার মধ্যে দিয়েই কিভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশটাকে আকর্ষণীয় করতে হবে।’ তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘ নির্ধারিত এমডিজি খুব দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। এখন এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যে কারণে, এরমধ্যে আমরা কতকগুলো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যার মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন অন্যতম।’
অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে দেশে কখনো বিনিয়োগ আসতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নৌপথ, রেলপথ, আকাশপথে যোগাযোগ উন্নত করার জন্য তাঁর সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যা আমাদের ছিল, কিন্তু আজকে বিদ্যুৎ আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিনিয়োগের জন্য যেসব পদক্ষেপ তাঁর সরকার নিয়েছে তার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কর অবকাশের সুবিধা দিয়েছি, সমগ্র বাংলাদেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, উন্নয়নটা যাতে একটা জায়গায় না হয়ে সমগ্র বাংলাদেশে হয় সে ব্যবস্থা তাঁর সরকার নিয়েছে। যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সহজে করা যাবে এবং শ্রমিকও খুব সহজে পাওয়া যাবে।
‘শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত করতে কর রেয়াত দেওয়া হচ্ছে, মূলধনী সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ আমরা দিচ্ছি,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও সচিব তোফাজ্জ্বল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি, বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে বিনিয়োগকে আরো আকর্ষণীয় করার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে পরিবর্তিত করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে আরো বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে হবে, এটার সুযোগ আছে। অনেক দেশে এখন কারখানা বন্ধ। আমাদের জনসংখ্যা আছে, জমি তৈরি আছে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছে। এই সুযোগটায় আমরা কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট আরো বেশি আকর্ষণ করতে পারি এবং আনতে পারি।’ তিনি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলায় আত্মনিবেদনের জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান।