বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে ভাষা সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন। যা পরবর্তীতে বাঙালিকে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে আরও আন্দোলন করার ক্ষেত্রে সাহস যুগিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির সংগ্রামে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙেছিল।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় ১৪ দলের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, সাম্যবাদী দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মোশায়েত আহম্মেদ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব মো. আল ফারুক, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও পলিটব্যুরোর সদস্য সুশান্ত কুমার দাস, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি কথা অনেকেই বলেন না। অনেকের লেখায় এটা অনুপস্থিত। সেটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনটা শুরু করলেন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ধাপে ধাপে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের শুরুতে কারাগারে থাকা অবস্থায় যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশনে ধর্মঘট করবেন এবং বাইরে আন্দোলন করতে হবে।’

১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ‘তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় নেতাদের খবর দিয়ে এনে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ২১, ২২ ও ২৩; এই তিনদিনের কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলা ভাষার দাবি, ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল আরবি হরফে বাংলা লেখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল রাজবন্দিদের মুক্তি। তিনটি দিন ধার্য করা হয়েছিল কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মধ্য দিয়ে অন্য দুটি দিবস আর পালিত হয়নি।’

আমির হোসেন আমু আরও বলেন, ‘১৯৪৭ সালের পর এই দেশ পাকিস্তান, মুসলিম লীগ, মুসলমান, জিন্নাহ এই চার ছিল একাকার। এর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার সাহস কেউ চিন্তাও করতো না। ঠিক সেই মুহূর্তে এই ভাষার দাবিটি যখন সামনে আসে, এটাই তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছিল। ভাষাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেটি বাঙালিকে আরো আন্দোলনের পথ দেখায়।’

বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার উন্মেষ যাতে না ঘটে সেজন্য বাঙালিদের মনে বিজাতীয় ভাবধারা সৃষ্টি করার জন্য উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পরিকল্পনা ছিল উল্লেখ করে আমু বলেন, ‘তার পাল্টা ঘটনাই ঘটল ভাষার দাবিতে আন্দোলন। জিন্নাহ সাহেব যখন বললেন উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা, বঙ্গবন্ধুসহ তার সহকর্মীরা যখন প্রতিবাদ করলেন সেই প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই জিন্নাহ যে আনপ্যারালাল লিডার, সেটি পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রনেতাদের কাছে খণ্ডিত হয় এবং তার সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ করার মধ্য দিয়েই কিন্তু এই দেশের মানুষের সাহসিকতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।’

জিন্নাহ বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলা মাতৃভাষা আন্দোলনে বাঙালির জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং মাইলফলক ছিল উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘পাকিস্তানিরা একটা অস্ত্র বাঙালির হাতে তুলে দিয়েছিল, বুঝে হোক না বুঝে হোক।’

মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। পৃথিবীর আর কোনো জাতি নেই, যারা মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির সংগ্রামে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙেছিল। নানা সংকট থাকা স্বত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। দেশ আজ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরেকটা ধারা যারা আমাদের স্বাধীনতা উন্নয়ন অগ্রগযাত্রায় বিশ্বাস করে না; সেই ধারা বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বে। এই বিষয়ে জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে।’

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের ক্ষেত্রে এই মহান শহীদ দিবস যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হয়েছে, সেটি আমাদের উপলব্ধিতে বোধে চেতনায় আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার সূচনা করেছিল। ভাষা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তিনি আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে ভাষা সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন।’