পি কে হালদারের কোম্পানির তিন পরিচালককে ডেকেছে দুদক
রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক নোটিশে তাদেরকে আগামী ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচার করেছেন।
তলব করা ব্যক্তিদের মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের পরিচালক ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নিজামুল আহসানকে ২৭ জানুয়ারি এবং পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইলকে ২৮ জানুয়ারি হাজির হাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। তবে মামলা করার আগেই লাপাত্তা পি কে হালদার।
ওই এজাহারে প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার স্বার্থ–সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক এক হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়ে তথ্য ছিল। দুদক বলছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার।
এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বেশ আগেই অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য অনুরোধ করে। এর ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের অর্থ লেনদেন নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে অনিয়ম ও জালিয়াতির বিভিন্ন চিত্র উঠে আসে।
এর আগে অনুসন্ধানকে আরো এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিবেদনসহ বেশকিছু নথিপত্র তলব করেছিলেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
ক্যাসিনোবিরোধী সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিল সংস্থাটি। তার আগে ৩ অক্টোবর তাঁর বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের বিষয়ে অন্য একটি সূত্র জানায়, পি কে হালদার ও তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা, পি কে হালদারের হিসাবে ২৪০ কোটি টাকা এবং তাঁর মা লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হয় ১৬০ কোটি টাকা। তবে এসব হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ১০ কোটি টাকার কম।
অন্যদিকে পি কে হালদার এক ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই দুই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়েছেন। এসব টাকা দিয়েই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা কেনা হয়। তবে ঋণ নেওয়া পুরো টাকার হদিস মিলছে না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে পি কে হালদারসহ ১৯ জনের সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।