পিইসি, জেএসসি পরীক্ষা এবার নাও হতে পারে
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এবার পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিষয়টি আগামী রোববার বা সোমবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একইসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ব্যাপারেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ চারটি পরীক্ষা এবার না নেওয়ার পক্ষে বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের সমাপনী বা পিইসি ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাইব। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত আসবে আমরা সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। তবে এ বিষয়ে আমরা শিক্ষাবিদসহ শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন এমন অভিজ্ঞ লোকজনেরও পরামর্শ নেব।‘
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পিইসি, জেএসসি, ইইসি ও জেডিসি পরীক্ষা না হলে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেবে।
করোনাকালে তিন বিকল্প ভাবনা
এদিকে শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন শিক্ষা নিয়ে ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলমান অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না- এটা ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিনটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা নিয়েও ভাবছে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বছরের শুরুতে পুরো তিন মাস ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এখন চলছে আগস্ট মাস। চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য সামনে আরো পাঁচ মাস আমাদের হাতে রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাবর্ষ সম্পন্ন করার পর বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিগুলোতেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, “এ পরিস্থিতি যদি আরো তিন মাস স্থায়ী হয়, তাহলে আমরাও চলতি শিক্ষাবর্ষকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাব। সে ক্ষেত্রে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ক্লাস চলবে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ভেতরেই যদি পুরো শিক্ষাবর্ষ চলে যায়, সে ক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা হলো শিক্ষার্থীদের ‘কোর কম্পিটেন্স’ বা যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণির জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হবে।” বর্তমানে ‘কোর কম্পিটেন্স’ পদ্ধতি নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
‘এইচএসসিতে অটো পাসের চিন্তা অমূলক’
করোনাভাইরাসের কারণে এবারের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীদের অটো পাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে- এমন একটি গুঞ্জন এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কয়েকটি গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ গুজব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে এ ধরনের চিন্তা করাটাই অমূলক। আমরা এখনো আশাবাদী, একটু দেরিতে হলেও যথানিয়মে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।