‘পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির বিধান আরও কঠোর করতে হবে’
পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির বিধান সংশোধন করে আরও কঠোর করতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, পারিবারিক আদালত অবমাননায় সিভিল জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
সন্তানের হেফাজত নিয়ে মায়ের দায়ের করা রিট খারিজ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘পারিবারিক আদালতগুলোর বিভিন্ন আদেশ, বিশেষত শিশু সন্তানকে দেখা-সাক্ষাতের আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষ মান্য করছেন না। ফলশ্রুতিতে তারা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস অধিক্ষেত্রে এসে আশ্রয় গ্রহণ করছেন।’
পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর ধারা ১৯ অনুযায়ী, পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে সিভিল জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। আদালত প্রত্যাশা করে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা করবেন।’
একই সঙ্গে দেশের সব পারিবারিক আদালতে শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে থাকা মামলাগুলো ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে রায়ে আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টের নজরে এসেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের দাখিলকৃত মামলাগুলো এখনও বিচারাধীন। শিশুদের অভিভাবক ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো এতো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকা হতাশাজনক এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৯ অনুযায়ী, দেশের সব পারিবারিক আদালতকে শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো যাতে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মোতাহার হোসেন সাজু। অপরপক্ষে ছিলেন ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘দেশের পারিবারিক আদালতের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এই রায় বাস্তবায়ন হলে পারিবারিক আদালত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।’
মামলার বিবরণ দিয়ে আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু জানান, ২০১১ সালে রংপুরের মেয়ে ও রাজশাহীর এক ছেলের বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে তাদের কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। এ অবস্থায় শিশুটিকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন শিশুটির মা। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে শিশুটির মা পারিবারিক আদালতে একটি মামলা করেন। রুলের শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত রায় দেন। পারিবারিক আদালতে শিশুটির মায়ের করা মামলাটি ৩১ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আদালত।