পরিবর্তন হচ্ছে কৃষক লীগের গঠনতন্ত্র

স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক মুক্তি ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চাষাবাদে কৃষককে সহযোগিতা দেওয়া ও কৃষির সমৃদ্ধির জন্য ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক লীগ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এখন রাজধানীর অভিজাত এলাকা ও বিদেশেও এর শাখা রয়েছে। দলীয় কর্মসূচিতেও তাদের উপস্থিতি অন্য সংগঠনের তুলনায় অনেক কম।
আর এসব প্রশ্ন সামনে রেখেই আগামীকাল বুধবার হতে যাচ্ছে কৃষক লীগের দশম জাতীয় সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে কৃষি ও কৃষকের উপযোগী নেতৃত্ব আসবে বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাই পরিবর্তন হচ্ছে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র।
সংগঠনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ-বাণিজ্য, বিদেশে শাখা অনুমোদন নিয়ে বেশ কয়েকবার বিতর্কিত হয়েছে কৃষক লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এবার কৃষক লীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হচ্ছে।
কৃষক লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১১। এটা সংশোধন করে গঠনতন্ত্রের খসড়ায় ১৫১ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সহসভাপতি ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনজন থেকে পাঁচজন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাতজন থেকে বাড়িয়ে নয়জন করার প্রস্তাব করা রয়েছে। এ ছাড়া নতুন যুক্ত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া ও যুববিষয়ক সম্পাদক, কৃষিশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, কৃষি উপকরণ বিষয়ক সম্পাদক, কৃষিপণ্য পরিবহনবিষয়ক সম্পাদক পদ। আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০টি বিভাগীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে একটি করে সহসম্পাদকের পদ ছিল। এবার আরেকটি করে সহসম্পাদক পদ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
জেলা-উপজেলা কমিটির আকারও বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবে গঠনতন্ত্র উপকমিটি। বর্তমান জেলা কমিটি ৮১ জনবিশিষ্ট, যা ৯১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব থাকছে। উপজেলা কমিটি ৭১ জনের স্থলে ৮১ জন, ইউনিয়ন বা সমমর্যাদার কমিটি ৬১ জনের স্থলে ৭১ জন এবং ওয়ার্ড কমিটি ৫১ জন থেকে বাড়িয়ে ৬১ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া এবার কয়েকটি সম্পাদকীয় পদের নামে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সমবায় সম্পাদকের স্থলে কৃষি সমবায় সম্পাদক, কুটির শিল্পের স্থলে কৃষি-শিল্প ও বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুর স্থলে মৎস্য ও প্রাণী, কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্থলে কৃষি বিজ্ঞান ও আইটিবিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের স্থলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
কৃষক লীগকে গণমুখী ও গতিশীল করতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হচ্ছে বলে সংগঠনটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
এদিকে দেশের বাইরে কৃষক লীগের কমিটি দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিদেশে কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা আনা হচ্ছে গঠনতন্ত্রে।
গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের বিষয়ে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে এবার গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আশা করি, আগামীকালের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেবেন।’
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিলে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ১৫ আগস্টে শহীদ কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত নয়বার সম্মেলন হয়েছে কৃষক লীগের। আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দশম সম্মেলন।