নৌকায় জন্ম নিল ওমর ফারুক
খোলপেটুয়া নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ যেন হঠাৎ থমকে গেল। কানে শোনা গেল এক নতুন অতিথির কান্নার স্বর। বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলেন সবাই। মিনারা খাতুন ভাসমান নৌকায় জন্ম দিয়েছেন একটি ছেলে সন্তান। তিনি মা হয়েছেন। আনন্দে আত্মহারা ইয়াকুব-মিনারা দম্পতি যেন হাতে পেলেন একফালি চাঁদ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এই শিশুটি জন্ম নেয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ইয়াশ ও আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলাবদ্ধ ইউনিয়ন প্রতাপনগরের খোলপেটুয়া নদীতে।
ভরা জোয়ারে নৌকাটি যখন পানির তোড়ে দুলছিল, তখনই আলোর মুখ দেখল শিশুটি। মা মিনারা খাতুনের চোখেমুখে হাসি। সদ্যজাত শিশুর চাঁদমুখ যেন তাঁর সব কষ্ট ধুয়ে মুছে নিয়েছে।
শিশুটির বাবা জেলে ইয়াকুব আলী বলেন, ‘হাতুড়ে ডাক্তার বলেছিল, প্রসব হতে আরও কদিন সময় লাগবে। এর আগেই আমি ছেলের বাবা হয়েছি।’
ইয়াকুব আলী আরও বলেন, ‘একদিকে টাকাকড়ি হাতে নেই। তার ওপর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। বউটারে যে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব, সে সক্ষমতাও নেই আমার। আম্পান আর ইয়াশ আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।’
ইয়াকুব আলী জানান, ‘আট মাস ধরে এই নৌকায় আমার সাত সদস্যের পরিবারের বসবাস। ইয়াশের দাপটে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে খোলপেটুয়ার বন্যতলা গ্রামে আমার বসতঘর। এখন সেখানে জোয়ার-ভাটা খেলে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। নিরুপায় হয়ে আমি, আমার মা, স্ত্রীসহ অন্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি নৌকায়। নৌকায় থাকি, নৌকায় খাই। এটাই আমাদের বসতঘর। এরই মধ্যে আমাদের জীবনে এল এই সন্তান। ওর নাম রেখেছি- ওমর ফারুক। মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে।’