নোয়াখালীর নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুক থেকে সরানো হয়েছে
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ওই ভিডিও ফুটেজটির একটি কপি সংরক্ষণ করেছে বিটিআরসি।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল ও শুনানি করেন বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ওই ঘটনা আদালতের নজরে আনা আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, আদালতের আদেশ মতো ভিডিওটির একটি কপি সংরক্ষণ করা হয়েছে। একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে ফুটেজ সরানোর কথা ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে।
এর আগে এই মাসের শুরুতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও ঘটনার এক মাস পর তা প্রকাশিত হয়। বিষয়টি সারা দেশে আলোড়ন তুলে। এসব প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলায় আদালতে মতামত তুলে ধরে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ইয়াদিয়া জামান, জামিউল হক ফয়সাল, রাশিদা চৌধুরী নিলু ও তানজীম আল ইসলাম প্রমুখ।
পরে ৫ অক্টোবর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ কয়েকটি আদেশ দেন। আদালত তাঁর আদেশে, ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ভিডিওটি সিডি বা পেনড্রাইভে কপি করে রাখার নির্দেশ দেন। বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
পাশাপাশি ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগী নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।
একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে ওই ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে বলা হয়। অনুসন্ধান শেষে ১৫ কার্যদিবসের হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এ ছাড়া ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ওই প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কয়েকটি আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চান আদালত। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।