‘নতুন ঘরে ঈদ করা হইলো না আমার সোনার’
ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে গতকাল বুধবার বোনের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল শরীয়তপুরের কিশোর আনছার আলী মাতবর (১৬)। সেই আনছার গ্রামের বাড়ি গেছে। তবে মৃতদেহ হয়ে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, আনছার আলী মাদবর শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গ্রামের গিয়াসউদ্দিন মাদবরের ছেলে। সে ঢাকার মীর হাজিরবাগ এলাকায় একটি স্টিল কারখানায় কাজ করত। ঈদে কারখানা বন্ধ। তাই বোন নয়নতারার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ফিরছিল। ঢাকা থেকে শিমুলিয়া ঘাটে তারা পৌঁছায় গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে। নদী পার হতে ১০টার দিকে শাহপরান ফেরিতে ওঠে। এ সময় মানুষের ভিড়ে পদদলিত হয়ে মারা যায় আনছার। দুপুর ১২টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে পৌঁছলে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আছরের নামাজের পর জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে আনছারকে দাফন করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে কালিকাপ্রসাদ গ্রামে আনছারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বোন নয়নতারা বাকহীন। মা নাছিমা বেগম উঠানে বসে সন্তানের ছবি হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন। প্রতিবেশী আর স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিলাপ করতে করতে আনছারের মা নাছিমা বেগম বলেন, “নতুন ঘরে ঈদ করা হইলো না আমার সোনার। আনছার কইছিল, ‘কিস্তি উডাইয়্যা ঘরের কাম শেষ করো মা। আমি কিস্তি চালামু। চিন্তা কইরো না মা, আমাগো আর ঢাহায় ভাড়া ঘরে থাকন লাগব না। আমরা আমাগো বাড়িতে থাকুম।’ কিস্তি উঠাইয়া ঘরের কাম শেষ করছি। ছেলে আসতেছিল মিলাদ দিয়ে নতুন ঘরে ঢুকে ঈদ করবে। ছেলে আমার বাড়িতে আসছে। নতুন ঘরে আর ঢোকা হলো না। চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে কবরে।’
পারিবারিক সূত্র জানায়, আনছারের বাবা গিয়াসউদ্দিন মাদবর তিন ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে নয় বছর আগে কাজের সন্ধানে স্বপরিবারে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় গিয়ে মীর হাজিরবাগ এলাকায় একটি ভাড়া ঘরে থেকে বসবাস শুরু করে তারা। পরিবারের সবাই মিলেই কাজ করতেন ওই এলাকার বিভিন্ন কল-কারখানায়। সবার উপার্জনে ভালোই কাটছিল তাদের জীবন। গত বছর করোনা আঘাত হানার পরে পরিবারের অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ঢাকা শহরে বসবাসের খরচ চালাতে না পেরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন তারা। পুরানো ঘরে বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনদের রেখে ঢাকায় কাজ করছিল আনছার (১৬)। সে ছিল পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর আনছারের উপার্জনেই চলতো তাদের পরিবার। গ্রামের বাড়িতে এসে কিস্তি করে নতুন করে একটি টিনের ঘর তৈরি করে আনছার। বাড়ি এসে মিলাদ দিয়ে নতুন ঘরে ওঠার কথা ছিল তার।