দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঢাকাকে শক্তিশালী করছে বিএনপি
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরুর পর বিএনপি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তিন দফায় সরকার গঠন করে। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে কোনোভাবেই যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দলটি। ২০০৮ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে ভরাডুবির পর যেন পথ হারিয়ে ফেলছে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলটি। মাঝে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে পরাজয় বরণ করে দলটি।
এর মাঝে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র আন্দোলন কর্মসূচি, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাসের টানা অবরোধ কোনো কিছুতেই সফলতার মুখ দেখেনি বিএনপি। বরাবরই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর দলের শীর্ষনেতারা মাঠে থাকতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের। এ নিয়ে টকশো, সভা-সেমিনারে ও দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনাও কম হয়নি। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যদিও বিএনপির নেতাদের দাবি, সরকারের জুলুম-নিপীড়নের ফলে তারা রাজপথেই নামতে পরেনি। কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সরকারের গণগ্রেপ্তার ও দমনপীড়ন শুরু হয়।
গত ১২ বছরে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম কোনোটাই সফল হয়নি। ২০১২-১৩ ও ২০১৫ সালে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে সরব থাকলেও ঢাকা ছিল একবারে প্রাণহীন। ঢাকায় কর্মসূচি পালনে দেখা যায়নি তেমন কোনো জোরালো কার্যক্রম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগরকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই তদারকি করছেন দলের কমিটি গঠন থেকে সবকিছু। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটিতেই অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করেছেন।
আহ্বায়ক কমিটি করেই শেষ নয়, ঢাকার সবকটি ওয়ার্ডের কমিটিও ভেঙে দিয়েছেন নতুন কমিটি করার লক্ষ্যে। আর সেই লক্ষ্যে এরই মাঝে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন নগরের নেতারা। এবারের নগর কমিটিতে আগের মতো বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রাখা ত্যাগী নেতাদেরই পদায়ন করার কথা বলছে নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যোগ্য ও ত্যাগী নেতৃত্বের খুঁজে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে যারা পদ-প্রত্যাশী তাদের তথ্য সংগ্রহ করছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সঠিক ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।
নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া কেমন হবে- জানতে চাইলে আমিনুল হক বলেন, কাউকে নেতা হওয়ার জন্য, পদ পাওয়ার জন্য কোনো নেতার অফিস বা বাসায় যেতে হবে না। বা কোনো নেতাকে প্রটোকল দিতে হবে না। যিনি যোগ্য ও ত্যাগী তাকেই মূল্যায়ন করা হবে। যারা দলের বিপদের দিনে মাঠে থেকেছেন তাদেরকে সামনে আনা হবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে, জিয়া পরিবারকে ভালোবাসে। বিগত সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামে বহু নেতাকর্মীকে হারিয়েছি আমরা। অনেকে দলের জন্য নিজের সবকিছু হারিয়েছেন। সবার অবদানকে দল শ্রদ্ধা করে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সেদিক লক্ষ্য রেখেই কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকল আলম মজনু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এবার আর মুখ দেখে কোনো নেতা নির্বাচন হবে না। যারা ত্যাগী, রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং রাখতে পারবে তাদের হাতেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। আর সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলমান আছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সেই অনুসারে নির্দেশনা দিয়েছেন। আর আমরা সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছি।
রফিকুল আলম মজনু আরও বলেন, কে কার লোক সেটি আর দেখা হবে না। কে বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলনে থাকতে পারবেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন তাকেই দল মূল্যায়ন করবে। আর সেজন্যে আমরা ঢাকার সবগুলো থানা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি যাতে যোগ্য লোক মূল্যায়িত হয়।
কবে নাগাদ কমিটি গঠনের এ প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে- জানতে চাইলে রফিকুল আলম মজনু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের তিন মাসের সময় দিয়েছেন মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো নতুন করে সাজাতে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রথমে ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা হবে। এরপর থানা কমিটি গঠন করা হবে।