দেশব্যাপী ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়
এক মাস সিয়াম সাধনার পর উৎসাহ উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে দেশব্যাপী পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর মধ্যে আজ সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। নামাজ আদায় শেষে মোনাজাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মোট পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নামাজ আদায় করতে মসজিদে আসতে থাকে মুসল্লিরা।
ঢাকার বাইরে থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
আরিচ আহমেদ শাহ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে প্রথম জামাত ও সকাল পৌনে ৯টার দিকে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম জামাতের ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মো. আলাউদ্দিন। ঈদের দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আহমদুল হক।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মসজিদে নামাজ আদায় করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
দেশে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদের ভেতর নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এ ছাড়া নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ২০০টির বেশি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
নাসির আহমেদ, গাজীপুর : সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জয়দেবপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি কামরুল ইসলামের ইমামতিতে নামাজে অংশগ্রহণ করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
নামাজ শেষে করোনা থেকে মুক্তি এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। শেষে নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান মেয়র।
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা : শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সকাল ৮টায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে ইমামতি করেন টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। এ ছাড়া কোর্ট জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের জামাতে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন।
নামাজ শেষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
নগরীর টাউন জামে মসজিদে ঈদের দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় এবং তৃতীয় ও শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন মসজিদে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে পৃথকভাবে নিজেদের সময় অনুযায়ী ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, খুলনার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়।
শিহাব উদ্দিন বিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সকাল থেকে মসজিদগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে একাধিক জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। সকাল ৭টা, পৌনে ৮টা ও সাড়ে ৮টার দিকে জেলা জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসক হায়াৎ উদ দৌলা খান, পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
এ ছাড়া জেলার চার হাজারেরও বেশি মসিজদে একাধিক জামাতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে করোনা থেকে মুক্তিসহ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, সচেতনতার অংশ হিসেবে সকাল থেকেই মসজিদগুলোতে চলে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম। সেই সঙ্গে মসজিদে প্রবেশের আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয়।
সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর : সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরের চকবাজার জামে মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
নামাজের আগে বক্তব্য দেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রশীদ প্রমুখ।
নামাজে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইনামুল হাসান। পরে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কামনা করা হয়।
ভজন দাস, নেত্রকোনা : করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নেত্রকানা জেলায় এবার চার হাজার ২১৬টি মসজিদ ও মাদ্রাসায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের প্রধান ও প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় জেলা শহরের মোক্তারপাড়া বড় মসজিদ এবং পারলা বিজিবি মসজিদে।
মোক্তারপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদে জামাতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।
সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের দ্বিতীয় জামাত শহরের এন আকন্দ আলীয়া মাদ্রাসা ও নাগড়া মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া জেলার ১০ উপজেলার হেডকোয়ার্টারসহ গ্রামাঞ্জলে একইভাবে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ : সামাজিক দূরত্ব মেনে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মসজিদে। এতে ইমামতি করেন কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন।
নামাজ শেষে দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এ ছাড়া শহরের বড় মসজিদ, আকুয়া মার্কাজ মসজিদ, চরপাড়া জামিয়া ইসলামিয়া, পুলিশ লাইন জামে মসজিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিটি মসজিদের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল, স্প্রে ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। এ ছাড়া ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করতে নিয়োজিত ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
হালিম খান, নাটোর : কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পরিবর্তে নাটোরে ঈদের প্রধান তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। জামাতে অংশ নেন জেলা প্রশাসক মোহম্মদ শাহরিয়াজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে শহরের আলাইপুর এলাকার নিজ মহল্লার মসজিদে নামাজ আদায় করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ ছাড়া সিংড়ার নিজ মহল্লায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং অন্য সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
অন্যদিকে, নাটোর শহরের চৌধুরীবাড়িসহ অনেক বাড়িতে পারিবারিকভাবে আদায় করা হয় ঈদের নামাজ।
শাহজাহান সিরাজ মিঠু, জয়পুরহাট : সকাল ৮টায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রধান জামাত।
নামাজে ইমামতি করেন জয়পুরহাট সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আবদুল মতিন। এ মসজিদে ঈদের নামাজের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়।
এ ছাড়া জয়পুরহাট চিনিকল জামে মসজিদ, শান্তিনগর সমজিদ, খনজনপুর মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদে পৃথক সময়ে ঈদের নামাজের একাধিক জামাত অুনষ্ঠিত হয়েছে।
ওছমান হারুন মাহমুদ, ফেনী : সকাল ৮টায় ফেনী শহরের কেন্দ্রীয় বড় মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে শত শত মুসল্লি অংশ নেয়। এ সময় তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করে এবং নামাজ শেষে তারা নিয়ম মেনে কোলাকুলি ও হাত মেলানো থেকে বিরত থাকে।
এদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে অন্যবারের মতো ঈদগাহ ময়দানে জামাত না পড়াসহ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে গণজমায়েত এড়িয়ে ওজু করে ও জায়নামাজ নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই ঈদ জামাত সুশৃঙ্খলাভাবে পালন করাসহ মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায় শহরেজুড়ে।
আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : সকাল ৮টায় পৌর কেন্দ্রীয় বাজার জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান এ জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন পৌর মেয়র মো. জুলফিকার আলীসহ পৌরবাসী। এ সময় পৌর মেয়র জুলফিকার আলী পৌরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সবাইকে সামাজিক দূরত্ব এবং করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানান।
করোনাভাইরাসের কারণে নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকায় নিয়ম মেনেই মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছে মুসল্লিরা। দোকানপাট, হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকায় লোকজন নামাজ আদায় করেই যে যার বাড়িতে চলে যায়।
আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের ঈদগাহগুলোতে কোথাও কোনো জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। জেলার প্রায় সব মসজিদেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কয়েক ধাপে ঈদের নামাজ আদায় করেছে মুসল্লিরা। তবে সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নে কিছু কিছু এলাকায় পারিবারিকভাবে অনেকটা ভিন্ন রূপে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাকন রেজা, শেরপুর : সকাল ৯টার দিকে শেরপুর এস আর জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক।
শেরপুর জেলা সদরের মাঈসাহেবা মসজিদ, তেরাবাজার মসজিদ, নবীনগর মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি মসজিদেই দুই থেকে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি মসজিদেই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়।