দুস্থদের সহায়তায় ফরিদপুরের ডিসির ‘মানবিক সহায়তা কার্ড’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নানা বিধিনিষেধের ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের অংসখ্য মানুষ। এই বিশাল কর্মহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিতে কাজ করছেন সারা দেশের জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে, মানবিক সহায়তার কার্যক্রম প্রথাগত পদ্ধতিতে করতে গিয়ে অনেক সময় দ্বৈততা ও অস্পষ্টতা থাকে। এ অস্পষ্টতা দূরীকরণে ও মানবিক সহায়তার কাজটি আরো জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে। ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যবহৃত একটি মডেল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর সেটি এখন জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলার প্রায় আড়াই লাখ দুস্থ মানুষের তালিকা করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি করে মানবিক সহায়তা কার্ড।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কার্ডটি ডিজিটাল পদ্ধতি হওয়ার কারণে এই কার্ড নিয়ে দ্বৈততা দূরসহ ত্রাণ কার্যক্রম অনেক সহজ হয়েছে। এরই মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলাসহ বাকি আট উপজেলার ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদের আড়াই লাখ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানা যায়, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সময়োপযোগী সৃষ্টি এই মানবিক সহায়তা কার্ড। এই কার্ডে উপকারভোগীর পরিবারের সব তথ্য দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া ছবিযুক্ত কার্ড থাকার কারণে অনেকে চাইলেও এই কার্ডধারী ব্যক্তিকে বাদ দিতে পারবে না। আবার একই ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গা থেকে একবারের বেশি মানবিক সহায়তা নিতে পারবে না। এই কার্ডের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানবিক সহায়তার জন্য একটি ওয়েবসাইট সাজানো হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে ওয়ার্ড অনুযায়ী উপকারভোগীদের সব তথ্য দেওয়া থাকবে। ওয়েবসাইটটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করার পর এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এতে কোন এলাকা থেকে কে মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন, আর যিনি মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন, তিনি মানবিক সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত কি না এবং কেউ মানবিক সহায়তার আওতা থেকে বাদ পড়লেন কি না, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা যাবে। মানবিক সহায়তা দেওয়ার এ প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তাকে সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রেখে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা নিয়ে আসবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানা গেছে, অন্য জেলাতেও এই মানবিক সহায়তা কার্ড করার জন্য বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসকদের দপ্তরে সরকারের কাছ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে অন্য জেলা প্রশাসনও এভাবেই ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাওয়া মানবিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমকে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে অসহায় মানুষকে সহায়তার বিষয়টি সময়োপযোগী পদ্ধতির ভেতরে নিয়ে আসার জন্য জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের এক অনবদ্য সৃষ্টি মানবিক সহায়তা কার্ড। দেশের মধ্যে প্রথম ফরিদপুরে এই মানবিক সহায়তা কার্ডের যাত্রা শুরু করছে। জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগ এরই মধ্যে দেশের অন্য সব জেলা প্রশাসন গ্রহণ করছে।’
ইউএনও আরো বলেন, ‘আমরা সদর উপজেলার ৩৩ হাজার পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করেছি। এখন এই কার্ড ধরে তাদের সহায়তার কার্যক্রম চলছে। আমরা এই করোনা পরিস্থিতিতে ১৫ দিন পরপর কার্ডধারীদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।’
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘মানবিক সহায়তা কার্ডটি স্বচ্ছ কথায় একটি ডিজিটাল পদ্ধতির কার্ড। এর মাধ্যমে একটি কার্ড থেকে কে কতবার ত্রাণ নিয়েছে, তা খুব সহজে জানা যাবে। মূলত, প্রথাগত পদ্ধতিতে এ কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় দ্বৈততা ও অস্পষ্টতা থাকে। এখন থেকে এ অস্পষ্টতা দূরীকরণে ও মানবিক সহায়তার কাজটি আরো জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আওতায় আনা সম্ভব হবে। জেলার পুরো চিত্র একটি সফটওয়্যারের মাধমে থাকবে। একই সঙ্গে এই সফওয়্যার ব্যবহার করে কারো যদি অভিযোগ থাকে, সেটাও সেখানে লিখতে পারবে এমন অপশন রাখা হয়েছে। এমন কোনো অভিযোগ পেলে আমরা যাচাই শেষে বিষয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
অতুল সরকার আরো বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব। এরপর আমাদের জেলার দুস্থদের নিয়ে বারবার ভাবতে হবে না। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পরিষদের পুরো তথ্য এখন একটি জায়গায় থাকবে।’
সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এখন কার্ড দেওয়া হয়েছে। এরপর এসব কার্ডে একটি করে বার কোড দেওয়া থাকবে, যাতে এই কার্ড নকল বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যবহার করা না যায়।’