থাকবে পাহাড়-খাল, দূর হবে জলাবদ্ধতা, ইশতেহারে শাহাদাত
পাহাড়-নদী-সাগর দিয়ে পরিবেষ্টিত বন্দরনগরীর ‘প্রকৃতির সৌন্দর্যকে’ অক্ষুন্ন রেখে একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলার রূপকল্প নিজের ইশতেহারে তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী।
ডা. শাহাদাত হোসেন এজন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুষঙ্গ পাহাড় ও খালগুলোকে অক্ষুন্ন রাখতে চান; পাশাপাশি নগরীবাসীর ‘গলার কাঁটা’ জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ’ নিতে চান।
নিজের নির্বাচনি ইশতেহারে ধানের শীষের এই প্রার্থী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর একটি পাহাড়, সাগর ও নদী পরিবেষ্টিত শহর। পাহাড় হতে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন খাল হয়ে শহরের মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি মাটি পড়ে খাল ও নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে তা খালে গিয়ে পড়ে। যা নিরসনে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করব।‘
‘জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খাল উদ্ধার করে তা পানি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং খালের উভয় পাশ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রতি বছর বর্ষার আগে শহরের সব খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারসহ পানি চলাচলের উপযুক্ত করে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করব’, যোগ করেন মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত।
আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন ধানের শীষের প্রার্থী। ‘চলো সবাই বাঁধো জোট, এবার দেবে আমার ভোট’ এই স্লোগানে নয় দফা মূল কর্মসূচি তুলে ধরা হয় ইশতেহারে। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ভোটারদের নিশ্চিতে কেন্দ্রে যাওয়ার নিরাপত্তা, প্রত্যেকের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথার ফুলঝুরি নয়, সমস্যার সফল বাস্তবায়নই লক্ষ্য’- উল্লেখ করে ২০ দলীয় জোটের এই প্রার্থী বলেন, ‘নগরপিতা নয়, আমি নগরসেবক হতে চাই। ছাত্রজীবন থেকে চেষ্টা করেছি চট্টগ্রামের গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে। নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হতে।’
একজন চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্যসেবায় সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন উল্লেখ করে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘একটি পরিচ্ছন্ন নগর এবং নগরবাসীর উন্নত জীবন গড়তে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, নগরের সৌন্দর্যবৃদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ, নাগরিক বিনোদন, কর্মসংস্থান, পরিবেশ দূষণ ও ভেজালমুক্তকরণ, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজমুক্তকরণ, সর্বপ্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি করপোরেশনের সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সুষম বণ্টন এবং নগরবাসীকে অন্যায্য কর আরোপ হতে ভারমুক্ত রাখাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। অবৈধ দখল উচ্ছেদ, স্বজনপ্রীতিমুক্তকরণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন চ্যালেঞ্জ-উত্তরণে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
পর্যটন বিকাশের পরিকল্পনা তুলে ধরে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, নগরীকে অল্প সময়ে বিশ্বের অন্যতম নগরীতে পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বিরল প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের আলোকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন করে আধুনিক আকর্ষণীয় পর্যটন নগর গড়ে তোলা হবে। নগরবাসীর সুবিধা নিশ্চিত করে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশি পর্যটন আকর্ষণের নিমিত্তে দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, বিনোদনকেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে।
মেয়র পদপ্রার্থী আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় এনে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন, স্কুলে প্রবেশ, প্রস্থান, ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও পরীক্ষার ফলাফল সবকিছু যাতে অভিভাবকরা ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারি নির্দেশনার আলোকে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবনে নেতৃত্ব ও গুণাবলী অর্জনের নিমিত্তে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ডা. শাহাদাত আরো বলেন, ‘নগরবাসীর নাগরিক অধিকার আমাদের সংবিধান নির্দিষ্ট করেছে- কিন্তু সে অধিকার দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র তার বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ কাজ করে থাকে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যদি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনই পারে বিদ্যমান উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে নগরবাসীর দোরগোড়ায় উন্নয়ন পৌঁছে দিতে। নির্বাচিত হলে আমি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এ প্রচেষ্টায় সফল হব ইনশাআল্লাহ।’
ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়, আপনাদের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়। আপনার পরিবারের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়, আপনার আত্মীয়-স্বজনের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়। অর্থাৎ ভোট কেড়ে নিয়ে অবৈধ ব্যালট আমরা দেখতে চাই না। অন্তত চট্টগ্রামবাসী যাতে ভোট দিয়ে তাদের একজন মেয়রকে নির্বাচিত করতে পারে- সেজন্য আপনারা সহযোগিতা করবেন।’
এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।