তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে বাধ্য হবে সরকার : ১২ দলের শীর্ষ নেতারা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মানতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। সেই সঙ্গে অবিলম্বে রমজান মাসে বাজারে পণ্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার দাবি জানান তারা।
আজ শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীতে এক সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকের পেছনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট। তবে জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির কেউ আজকে ছিলেন না।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যা দরকার তা মেনে নিতে হবে। কিন্তু এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আদালতের রায় অমান্য করেছে। রায়ে বলা হয়েছিলো আরও দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই সরকার সেই রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তা বাতিল করেছে।’
মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘এই সরকারের কাছে ন্যায় বিচার দাবি করা বাতুলতা মাত্র। তবে এই সরকার নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি মানতে বাধ্য হবে। আমরা বলবো- বাংলাদেশ ও জনগণের স্বার্থে অতিদ্রুত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন, আর নিরপেক্ষ সরকার বলেন যে নামেই হোক তা গঠন করুন।’ সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘কদিন পরই রমজান মাস শুরু হচ্ছে। অবিলম্বে বাজারের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন। না হলে মানুষের কষ্ট হলে সেই অভিশাপে আপনার জ্বলে যাবেন। আমরা জরুরিভিত্তিতে বাজারের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে দাবি জানাই। প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যত লাগে ডলার খরচ করুন। পারলে বিনামূল্যে ইফতার সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’
এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের বলেন, ‘এই সরকার উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করেছে। তারা সীমান্তে মানুষ হত্যা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এই সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে। সর্বশেষ আপনারা দেখেছেন গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কী ঘটেছে তা সবাই দেখেছেন। সুতরাং আসুন এই ভোট চোর সরকারকে বিদায় করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ি। তা না হলে কারো মুক্তি মিলবে না।’
সমাবেশে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে সরকার ও সরকারি দলের আচরণ তত ভয়ঙ্কর ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পরাজয়ের আতঙ্কে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জনগণের ভোটে অবাধ নির্বাচনকে এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভয়। কারণ জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠনের সাহস এই সরকারের নেই। জনসমর্থনহীন এই সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। বিদ্যুৎ গ্যাস জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করতে করতে দ্রব্যমূল্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেছে। মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে হিমসিম খাচ্ছে। জনগণের সামনে এখন একটাই চাওয়া এই লুটেরা সরকারের বিদায়।’ নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সরকারি দলের জালিয়াতির পক্ষে পুলিশের ভূমিকা ও মারমুখী আচরণ দেশের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়া এবং ছবি তোলার অপরাধে সাংবাদিকদের বেধড়ক পিটিয়ে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। দেশেন প্রধান বিচারালয়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নজিরবিহীন কলঙ্ক অধ্যায় রচিত হয়েছে। মানুষের শেষ ভরসাস্থলটাও ভেঙে পড়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর মহড়া এই নির্বাচন। এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব নয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পেশিশক্তি ও পুলিশী আক্রমনের ভূমিকা তার সর্বশেষ জলন্ত প্রমাণ।’
বক্তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। একটা স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে এমন দমন-পীড়ন হামলা মামলা অকল্পনীয় ব্যাপার।’
নেতৃবৃন্দ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে উল্লেখ করে বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ। তাই জনগণ সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করে অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়েই রাজপথ ত্যাগ করবে।
জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব এর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, ইসলামী ঐক্যজোটের অধ্যাপক আবদুল করিম, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাসানীর এডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের মহাসচিব মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ এলডিপির তমিজউদ্দিন টিটু, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জাগপার আসাদুর রহমানসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা।