ঢাকা-১৮ আসন : জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন না দিতে ৮ কাউন্সিলর প্রার্থীর অভিযোগ
ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন না দিতে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত আটজন কাউন্সিলর প্রার্থী। গতকাল শুক্রবার দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁরা এ লিখিত অভিযোগ দেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে লিখিত আবেদনে ঢাকা-১৮ আসন এলাকায় ১৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে আটজন কাউন্সিলর প্রার্থী স্বাক্ষর করেন। এতে তাঁরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এস এম জাহাঙ্গীর আঁতাত করে বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কাগজও সংযুক্ত করেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এস এম জাহাঙ্গীর ও তাঁর যুবদলের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে আতাঁত করেন। নির্বাচনের দিন বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীর জন্য তাঁর দেওয়া এজেন্টদের কেউই কেন্দ্রে যাননি। নির্বাচনী মাঠে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে এস এম জাহাঙ্গীর প্রচারণার সুযোগ নিলেও নির্বাচনের দিন ছিলেন নিষ্ক্রিয়। যার কারণে তাঁর নিজ কেন্দ্রে ধানের শীষ ভোট পায় মাত্র ১৯টি।
চিঠিতে কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলেন, এস এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্পর্ক থাকায় তাঁর ইন্ধনে বিএনপির দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁর সমর্থিত পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করে মাঠ ছেড়ে দেন। যার স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে, এস এম জাহাঙ্গীর সমর্থিত একজন প্রার্থী বাদে বাকি সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় এবং তাঁদের একজনের সমান ভোটও পায়নি বাকি চার প্রার্থী। এছাড়া ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর অনুগত হেলাল উদ্দিন তালুকদারকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রাখে।
এতে আরো বলা হয়, জাহাঙ্গীরের অনুগত বিএনপির দুটি থানার সভাপতি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে মিছিল করেছেন, নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যাজ গলায় ঝুলিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোটও চেয়েছেন। বিএনপির নগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুমের মাধ্যমে নিজে থানা বিএনপির পকেট কমিটি তৈরি করেছেন। যাদের নেতা বানিয়েছেন, তাঁরা সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ওঠা-বসাসহ ব্যবসা বাণিজ্যও করছেন। পকেট কমিটি করতে গিয়ে অন্য নেতাকর্মীদের জেলে পাঠানোসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লেলিয়ে দিয়ে হেনস্থাও করছেন, মাথা ফাটিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে একটি অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর নিজে আওয়ামী পরিবারের জামাই হিসেবে বিএনপির রাজনীতি করলেও বহাল তবিয়তে থেকেছেন দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর। উত্তরার অধিকাংশ নেতাকর্মী একাধিকবার আটক হলেও আটক হননি জাহাঙ্গীর। তিনি আঁতাত করে কয়েকটি মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পান। এসব মামলার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানার ৯(৮)১৮, উত্তরা থানার মামলা নম্বর ২৪ (৯) ১৮, ৯ (৮) ১৮ ছাড়াও একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলা থেকে তাঁর আপন শ্যালক উত্তরা থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অপু সিকদারেরও অব্যাহতি আনেন। আবার তাঁর আরেক শ্যালক দীপু সিকদার উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের নেতা।
গত ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। ওই আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে গতকাল বিএনপি কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেন এস এম জাহাঙ্গীর।