জামিন নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল হাসপাতালে
জামিন পেলেন অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। জামিনের পর তাঁকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুজাউদ্দৌলা আরিফুলের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আরিফুলের জামিনের জন্য কোনো আবেদন করা হয়নি।
‘আজকে জামিনের জন্য আপনি কারাগারে কোনো স্বাক্ষর করেছেন কি না’—হাসপাতালে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা কিছু করা হয়েছে, আমার অমতে হয়েছে।’
পরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব নীলুর সঙ্গে বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আরিফুলের জামিনের জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। কাউকে না কাউকে তো আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে জামিনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ ছাড়া স্থানীয় সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, তাঁরা আরিফুলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে এলেও আদালত ২৫ হাজার টাকা মুচলেকায় মামলাটি চলমান রেখে তাঁর জামিন দেন। কিন্তু সাংবাদিক ও এলাকাবাসী তাঁর নিঃশর্ত মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরিফুল তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার রাত ১২টার পর খেয়ে শুয়ে পড়ি। তখন একজন বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেন। পরিচয় জানতে চাইলে কেউ পরিচয় জানাননি। পরে আমি সদর থানার ওসিকে ফোন দিই। ফোন দেওয়ার কথা শুনে বাইরে থাকা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন লোকজন দরজা ভেঙে বাসায় ঢোকে। ঘরে ঢুকেই আরডিসি নাজিম উদ্দিন আমাকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। মারতে মারতে আমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়।’
‘এরপর আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টার দিতে চায়। আমাকে বারবার বলে, তুই কলেমা পড়ে ফেল, তোকে এনকাউন্টার দেওয়া হবে। এর পরে তারা আমাকে গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে যায়। আমি চোখের কাপড় একটু খুলে বুঝতে পারি, এটা ডিসির কার্যালয়। আবার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে এবং আমার ভিডিও করে রাখে,’ যোগ করেন আরিফুল।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফুল ইসলামকে। তাঁর বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
যদিও আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গত বছরের ১৯ মে ‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয় বাংলা ট্রিবিউনে। তবে শেষ পর্যন্ত ডিসির নামে সেই নামকরণ করা হয়নি। কুড়িগ্রামের ডিসি হিসেবে আছেন সুলতানা পারভীন।
তবে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বার্তা গতকাল শনিবার সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে তিনি দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’