জলবায়ু আলোচনায় ৫ প্রভাবশালীর একজন শেখ হাসিনা : বিবিসি’র প্রতিবেদন

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, জাতিসংঘের চলমান জলবায়ু শীর্ষক কপ-২৬ সম্মেলনের ফলাফলে প্রধান ভূমিকা রাখবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মতো অপর চার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। সম্মেলনে জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নতিতে ১৯৭টি দেশের কাছ থেকে কার্যকর প্রতিশ্রুতি আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
বিবিসির পরিবেশ বিষয়ক সংবাদদাতা ম্যাট ম্যাকগ্র্যাটের ‘জলবায়ু পরিবর্তন : কপ-২৬-এর ফলাফলকে প্রভাবিত করবে এমন পাঁচ চুক্তিকার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী পাঁচ ব্যক্তি হলেন—চীনের জলবায়ু আলোচক শি জেনহুয়া, সৌদি আরবের আয়মান শাসলি, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী অলোক শর্মা, স্পেনের ইকোলজিক্যাল রূপান্তর বিষয়ক মন্ত্রী তেরেসা রিবেরা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে এ পাঁচজন আলোচকের ওপর। সম্মেলনের ফলাফলের ওপর যাদের বড় প্রভাব রয়েছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮টি দেশের একটি গ্রুপ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের (সিভিএফ) প্রতিনিধিত্ব করেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হলেন- যারা জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন, সেসব দেশের মুখপাত্র। গত বছর বাংলাদেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বন্যার কবলে পড়ে এবং দেশের লাখ লাখ মানুষ প্লাবিত হয়।
যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. জেন অ্যালান বিবিসিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মতো ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি মানবিক ভাবমূর্তি তুলে ধরেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন এরই মধ্যে ধরিত্রীতে কী প্রভাব ফেলেছে, বিশ্বনেতাদের তা বুঝতে সাহায্য করতে পারেন। আলোচনার ক্ষেত্রে, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরাম এবং স্বল্পোন্নত দেশ গোষ্ঠীর একটি শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে, যদিও তারা অর্থনৈতিকভাবে অতটা সচ্ছল নয়।’
ড. অ্যালান বলেন, ‘এ দেশগুলো, একটি শক্তিশালী নৈতিক কণ্ঠস্বর। যেহেতু সর্বসম্মতভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারা জাতিসংঘের মেকানিজমের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রগতিশীল সিদ্ধান্ত পেতে সক্ষম হয়েছে।’
শেখ হাসিনার আলোচক দলের সদস্য বাংলাদেশি আলোচক কামরুল চৌধুরী বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘দুর্বল দেশগুলো একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে গ্লাসগোতে এসেছে। এখন ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাবের আওতায় রয়েছে। আমরা প্যারিসের অসামান্য নিয়মাবলি মেনে ধনী দেশগুলোক দ্রুত নির্গমন কমাতে, জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে সম্মত করে এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করার মাধ্যমে তাদের এ আওতা থেকে বের করে আনতে চাই।’
চীনের প্রবীণ জলবায়ু আলোচক শি জেনহুয়া মার্কিন জলবায়ু দূত সিনেটর জন কেরির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কাজের অংশীদারত্ব করেন। তাঁদের সম্পর্ক ২০১৫ প্যারিস চুক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা দেশগুলোকো নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হওয়ায়, আয়তনের কারণে চীনের গুরুত্ব রয়েছে এবং দেশটি কপ-২৬ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি আলোচনাকারী ব্লকের মূল সদস্য।
অনেক আরব দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ সৌদি আরবের নেতৃত্ব অনুসরণ করে। এসব দেশের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া কপ-২৬-এর সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না।
গত দশকে সৌদি রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকো’র সাবেক কর্মকর্তা সৌদি আরবের আয়মান শাসলি জলবায়ু আলোচকদের আরব গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন।

অন্যদিকে, কপ-২৬ আলোচনা সফল উপসংহারে আনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মা। কপ-২৬-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায়, তাঁর কথা ও কাজ গভীর মনোযোগের দাবি রাখে।
স্পেনের পরিবেশগত পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী তেরেসা রিবেরা কয়েক দশক ধরে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাঁর সরকারের সময়, তিনি স্পেনের কয়লা থেকে বের হওয়ার বিষয়টি তত্ত্বাবধানে সহায়তা করেছেন, যা চাকরিচ্যুতি না ঘটিয়ে নবায়ন যোগ্য জ্বালানির দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হিসাবে প্রশংসিত হয়েছে।