চুল কেটে নারী নির্যাতন, আসামি আ.লীগ ও বিএনপিনেতা
রাতভর নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ এনে ঝালকাঠির আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক নারী।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ পারভীন আক্তার (৩০) নামে ওই নারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বাদীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, তাপুর বোন সেলিনা আক্তার লাকি ও আইরীন পারভীন এ্যানি, মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী রাখি আক্তার এবং ফাতেমা শরীফ।
তবে মামলার আসামিরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, ‘মামলার কাগজপত্র হাতে এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বোরহান উদ্দিন খান তাঁর প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকিকে এক বছর আগে তালাক দেন। পরে তিনি গত ১০ জুলাই পারভীন আক্তারকে বিয়ে করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রথম স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন।
এর জের ধরে গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় সেলিনা আক্তার লাকি, তাঁর ভাই ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকাসহ আট থেকে ১০ জন তাঁদের বাসায় যান। এ সময় আসামিরা ঘরের ভেতরে ঢুকে পারভীন আক্তারকে মারধর করেন এবং নগদ দুই লাখ টাকা লুট করে নেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, পরে পারভীনকে জোর করে তুলে নিয়ে আসামিরা একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখেন। রাতভর তাঁকে নির্যাতন করে শরীরের বিভিন্ন অংশে চুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতন শেষে তাঁর চুল কেটে দেওয়া হয়। পরে ওই নারীর ভাই নুরুজ্জামান হাওলাদারকে ফোন করে আসামিরা দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরের দিন দুপুরে মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর পারভীনকে প্রায় অচেতন অবস্থায় ছেড়ে দেন আসামিরা।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে পারভীন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্যাতনের একপর্যায়ে শারমিন মৌসুমি কেকা, তাপু, তাঁর বোন ও সহযোগীরা মিলে আমাকে সারারাত নির্যাতন চালিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই নেয়। আমাকে মামলা না করার জন্য হুমকি দেয়। তাদের ভয়ে আমি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে পারিনি।’
পারভীন আক্তারের স্বামী বোরহান উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কেকা ও তাপুর ভয়ে আমার স্ত্রীকে সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে রাখি। সেখানে লোক পাঠিয়েও তারা আমার স্ত্রী ও তার পরিবারকে হুমকি দেয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে গুম ও খুন করে ফেলার ঘোষণা দেয় আসামিরা। আমরা তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। এই কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে। মামলা করার পরও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
তবে মামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসামি ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু বলেন, ‘আমার বোনকে সঠিক নিয়মে তালাক দেওয়া হয়নি। সে এখনো বোরহানের স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে বোরহান দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এ ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট ঘটনা। পারিবারিক একটি ঘটনায় আমাকে অহেতুক জড়ানো হয়েছে। সামনে পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমি মেয়র পদপ্রার্থী। তাই আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য মামলায় জড়ানো হয়েছে।’