ঘূর্ণিঝড়ের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে রেড অ্যালাট-৪ জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে স্ট্যান্ডবাই থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
আজ বুধবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলার পর বন্দরের অ্যালার্ট ৩ থেকে বৃদ্ধি করে ৪ নম্বরে নিয়ে আসা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল ও উদ্ধার টিম। খোলা হয়েছে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। নিম্ন এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার কাজও করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, অ্যালাট ৩ জারির সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি থেকে ১৯টি, বহির্নোঙর থেকে ৫১টি জাহাজ গভীর সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্যান্ট্রিক্রেনের বুম উপরে তোলা হয়েছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে জেটিতে নদীর কাছাকাছি রাখা কনটেইনারগুলো। ছোট জাহাজ কর্ণফুলী সেতুর উজানে আর বড় জাহাজ কুতুবদিয়ার মাতারবাড়ি এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত অভ্যন্তরীণ জাহাজ ও ছোট ছোট নৌযানগুলো কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উজানে কালুঘাট এলাকায় চলে গেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের তথ্যমতে, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বড় জাহাজকে সাগরে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলার কাজে নিয়োজিত আছে।’
ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম আরো বলেন, ‘সাগরে পানির লেভেল দুই মিটারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। যা জোয়ারের সময় আরো বাড়তে পারে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ আছে, জেটি থেকে সব জাহাজ নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। বাহির্নোঙরে অবস্থানরত সব বড় জাহাজকে গভীর সমুদ্রে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বন্দর ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি এখনো খুবই সীমিত আকারে চালু থাকলেও তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান জাফর আলম। তিনি বলেন, ‘সব লাইটারেজ জাহাজ শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করে রাখতে বলা হয়েছে, বন্দর চ্যানেল ক্লিয়ার রাখা হয়েছে। আজ সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার আকাশ আংশিক মেঘলা, থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে, সঙ্গে হালকা বাতাসও বইতে থাকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মহানগরী ও বিভিন্ন উপজেলার উপকূলীয় নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে মাইকিং করাসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। উপকূলীয় এলাকায় সব আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। কিছু লোক সরিয়ে আনছি। চেষ্টার পরও অনেকে নিজের বাড়িঘর থেকে সরতে চান না। এর মধ্যেও প্রশাসনের চেষ্টায় অনেকেই সরে এসেছেন।’
দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা কাজ করছেন উপকূলবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। সন্দ্বীপ উপজেলা থেকেও লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে আশ্রয়কেন্দ্রসহ স্কুল-কলেজের পাকা স্থাপনা মিলিয়ে চার হাজারের মতো স্থাপনা খুলে রাখা হয়েছে উপকূলবাসীর জন্য। এ ছাড়া লোকজনকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ কাট্টলী, বন্দর এবং পতেঙ্গা এলাকার লোকজন সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয় বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম।
চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী ছয়টি উপজেলা সন্দ্বীপ, মিরসরাই, সীতাকুণ্ডু, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কর্ণফুলীকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এসব এলাকার বাসিন্দাদেরও সরিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলার ক্ষয়ক্ষতি রুখতে ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৮৪টি মেডিকেল টিম। সংগ্রহ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।
এ ছাড়া জেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবারের ব্যবস্থাসহ প্রায় চার লাখ মানুষ থাকতে পারে এমন এক হাজার ৭৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খাবারের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে এক হাজার ৭৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র। প্রয়োজন অনুযায়ী এটি বাড়ানো হবে।’