রাজধানীর শাহ আলী থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতা ও তাঁর সহযোগী শহীদুল ইসলাম দিনারকে দুদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। 

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ এই আদেশ দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুজনকে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর এই আদেশ দেন।

অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে গত ১ আগস্ট সকালে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশন থেকে ইশরাত রফিক ঈশিতাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ সময় তাঁর সহযোগী শহীদুল ইসলাম দিনারকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে হাজির করা হলে রাজধানীর শাহআলী থানার প্রতারণা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের পৃথক মামলায় তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে আবারও ৯ আগস্ট শাহআলী থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাদের দুদিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। সেই রিমান্ড শেষ হলে আজ আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা হয়। 

গ্রেপ্তারের পর গত ১ আগস্ট রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে দুজনকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চিকিৎসক ঈশিতা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এ সময় তিনি বলেন, ঈশিতার এই মিথ্যা ও প্রতারণায় ভরা তথাকথিত সাফল্যের গল্প সত্য ভেবে দেশের প্রথম সারির বহুল জনপ্রিয় কিছু গণমাধ্যমও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনকে ঈশিতা নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানো ও প্রতারণা কাজে ব্যবহার করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গ্রেপ্তারের সময় ঈশিতার কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, ভুয়া প্রত্যয়নপত্র, ভুয়া পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০ পিস ইয়াবা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ এবং মোবাইল জব্দ করেছে র‍্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ইশরাত রফিক ঈশিতা নামের এই চিকিৎসক নিজের গগনচুম্বী ভুয়া সাফল্য ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারে লিপ্ত ছিলেন। এগুলো করে তিনি মূলত সুনাম অর্জন ও সুনামকে ব্যবহার অবৈধভাবে অর্থ উপর্জন করতেন। এসব তথ্য ঈশিতাই জিজ্ঞাসাবাদে আমাদেরকে জানিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈশিতা ময়মনসিংহে অবস্থিত একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালের জুনের প্রথম দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদেন। একই বছর তিনি একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে চারমাস চাকরি করার পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন ঈশিতা।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ইশরাত রফিক ঈশিতা প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাংক ব্যাচ ও পদ অর্জনের চেষ্টা চালান। তিনি ফিলিপাইনে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট (IPC.Phil.com) থেকে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর মতো ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদটি প্রাপ্ত হন বলে জানান। এ ছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অরগানাইজেশন, কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অরগানাইজেশন ইত্যাদি সদস্যপদের ভুয়া সনদ তৈরি করে প্রচারণা চালাতেন।’