ক্ষমা না চাইলে রাঙ্গাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা : হারুনুর রশীদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ।
আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ মিছিলের আগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মো. হারুনুর রশীদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। যুবলীগ নেতা শহীদ নূর হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, ১৯৮৭ সালের দিকে বাংলাদেশে ইয়াবা বলতে কোনো শব্দের জন্ম হয়নি। রাঙ্গা জাতির কাছে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। যেহেতু জাতীয় পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী সমঝোতা আছে, তাই জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যের স্বার্থে অবিলম্বে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যহতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে এবং মসিউর রহমান রাঙ্গা কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এদিকে গতকাল জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আলোচনা সভার সময় দলের মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে সুন্দরবনে, যদি বিশ্বজিৎ ও আবরারকে হত্যা করা না হতো তাহলে বলতাম গণতন্ত্র রয়েছে। শিক্ষককে পানিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। জাবি ভিসির পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছে ছাত্ররা।
‘ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিলেন নূর হোসেন। তাঁকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেনসিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পাননি। যারা গণতন্ত্রের ‘গ’ ও বুঝে না, অ্যাডিক্টেড একটি ছেলে নূর হোসেন। পুলিশ গুলি করল সামনে থেকে, আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কী হাস্যকর যুক্তি! তখন তো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।’
মসিউর রহমান রাঙ্গা আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদ না, খালেদা জিয়া স্বৈরাচার। খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। ২১ বছর পর এরশাদের অনুগ্রহে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়। আগে গণতন্ত্র বুঝতে হবে।’
এদিকে মসিউর রহমান রাঙ্গার বিচার চেয়েছেন নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি। আজ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাঙ্গার বক্তব্যের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে নূর হোসেনের পরিবার। সে সময় ব্ক্তব্যে মরিয়ম বিবি বলেন, ‘উনি (রাঙ্গা) কেনো ৩০ বছর পরে এ কথাটা বলল? দেশের জন্য নূর হোসেন জান দিল, উনার (রাঙ্গা) কি বিবেক ? উনার কি জ্ঞান-বুদ্ধি কিছুই নাই? রাজপথে নূর হোসেন বড়লোক হওয়ার জন্য নামে নাই। সে দেশের জন্য ও জনগণের জন্য নেমেছে।’
‘নূর হোসেন যদি নেশাখোর হতো, তাহলে দেশের জন্য জীবন দিত না। কারণ কোনো নেশাখোর দেশের জন্য জীবন দেয় না। যে লোক আমার ছেলেকে এই কথা বলেছে, তার বিচার জনগণের কাছে ছেড়ে দিলাম।’ বলে যোগ করেন নূর হোসেনের মা।
অন্যদিকে নূর হোসেনের ভাই আলী হোসেন তাঁর ব্ক্তব্যে বলেন, ‘দেশের জন্য প্রতিবাদ করে উনাকে (নূর হোসেন) যদি গাঁজাখোর, ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর বলা হয়। তাহলে দেশের মানুষ কীভাবে প্রতিবাদ করবে? সে সময় দেশে স্বৈরাচার ভর করেছিল। ওই সময় আন্দোলন করে তাকে হটানো হয়েছিল। ওই সময় অনেক লোক মারা গেছেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে সেই সময়ের শহীদদের এখন অপমান করা হলো। গণতন্ত্রের আন্দোলনে যারা মারা গেছেন, তাদের এত ছোট কেন করা হলো? জনগণের প্রতি আহ্বান জানাবো, রাঙ্গাকে বয়কট করা হোক। তার এমপি পদ কেড়ে নেওয়া হোক।’