করোনা মোকাবিলায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারির হাত থেকে দেশবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেসব নির্দেশনা জারি করেছে তার পরিমাণ দেখলে এবং সেগুলো পর্যালোচনা করলে কিছুটা অনুমান করা যায় এই করোনার মধ্যেও কতটা ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
সচিব জানান, শুধু কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেসব নির্দেশনা জারি করেছে তার পরিমাণ এক হাজার ৯৭৬ পৃষ্ঠা। ভবিষ্যতে করোনা মহামারির মতো দুর্যোগ মোকাবিলার কথা ভেবে এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এসব নির্দেশনা বই আকারে পাঁচটি ভলিউমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার তত্ত্বাবধানে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে জারি করা এসব প্রজ্ঞাপন সংকলন করা হয়েছে।
সচিব বলেন, এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের জারি করা নির্দেশনাগুলো সংরক্ষণ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতেও কাজে লাগতে পারে। তাই, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, এই করোনা মহামারির মধ্যেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি মুহূর্তে মনিটর করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণকে বড় মনে করেন। তাই, ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, জনগণকে সচেতন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার (জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

সরকারঘোষিত ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ হলো-
১. রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল (মোট বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা)।
২. ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান মোট বরাদ্দ ৩৩ হাজার কোটি টাকা)।
৩. ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান (মোট বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা)।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফের সুবিধা বাড়ানো (মোট বরাদ্দ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা)।
৫. প্রাক জাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (মোট বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা)।
৬. চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানি (১০০ কোটি টাকা)।
৭. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ (৭৫০ কোটি টাকা)।
৮. বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ (মোট বরাদ্দ দু্ই হাজার ৫০৩ কোটি টাকা)।
৯. ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয় (মোট বরাদ্দ ২৫১ কোটি টাকা)।
১০. লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ (মোট বরাদ্দ এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকা)।
১১. ভাতা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি (মোট বরাদ্দ ৮১৫ কোটি টাকা)।
১২. গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ (মোট বরাদ্দ দুই হাজার ১৩০ কোটি টাকা)।
১৩. বোরো ধান/চাল ক্রয় কার্যক্রম (মোট বরাদ্দ ৮৬০ কোটি টাকা)।
১৪. কৃষি কাজ যান্ত্রিকীকরণ (৩২ হাজার ২২০ কোটি টাকা)।
১৫. কৃষি ভর্তুকি (সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা)।
১৬. কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ( মোট বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা)।
১৭. নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (মোট বরাদ্দ তিন হাজার কোটি টাকা)।
১৮. কর্মসৃজন কার্যক্রম (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পিকেএসএফের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকা)।
১৯. বাণিজ্যিক ব্যাংকসমুহের এপ্রিল-মে/২০২০ মাসে স্থগিতকৃত ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি (দুই হাজার কোটি টাকা)।
২০. এসএমই খাতের ঋণের দায়িত্ব গ্রহণ (দুই হাজার কোটি টাকা)।
২১. রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন (এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা)।